হিলিয়াম আর হাইড্রোজেনের পরেই সৃষ্টি হয়েছিল অক্সিজেন গ্যাস। শুধু তাই নয়, প্রাণ ধারণের অন্যতম আবশ্যক শর্ত অক্সিজেন গ্যাসের উপস্থিতি। তাই এই গ্যাসটিকে ঘিরে বিজ্ঞানীদের উৎসাহের সীমা নেই। বিশেষত মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। কারণ এই প্রাচীন অণুটির অস্তিত্ব ব্রহ্মাণ্ডে খুব কমই মেলে। আর তাই চিনের অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের নতুন পর্যবেক্ষণকে ঘিরে জমা হয়েছে অসংখ্য প্রশ্ন। কারণ আকাশগঙ্গার বাইরে এই প্রথম অক্সিজেন অণুর সন্ধান পাওয়া গেল। আর সেই অস্তিত্ব ধরা পড়ল বিজ্ঞানীদের রেডিও টেলিস্কোপের রাডারে। অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তেমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানী জুনজি ওয়াং।
সৌরজগৎ থেকে ৫৬১ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি ছায়াপথ, মারকারিয়ান ২৩১। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ছায়াপথের কেন্দ্রে আছে দুটি শক্তিশালী ব্ল্যাক হোল। এর চারিদিকে দ্রুত বেগে প্রদক্ষিণ করে নক্ষত্রগুলি। ফলে প্রাণ ধারণের উপযুক্ত পরিবেশ সেখানে না থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন পরিবেশেই পাওয়া গেল অক্সিজেন অণু। ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে ৩২৬১৫ আলোকবর্ষ দূরে অক্সিজেন নিঃসরণের নির্ভুল সংকেত মিলেছে বলে দাবি চিনের বিজ্ঞানীদের। এই ছায়াপথে এখনও প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন তারার জন্ম হচ্ছে। প্রতি বছরে তার ভর বাড়ছে সূর্যের ভরের ১০০ গুণ। ফলে যে বিপুল পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হচ্ছে, তাকে শীতল রাখার কাজটি করছে অক্সিজেন। মহাবিশ্বের আণবিক কাঠামোতে এমন প্রত্যক্ষ প্রমাণ সত্যিই ঐতিহাসিক।
বিজ্ঞানীরা একসময় ধারণা করেছিলেন, কালপুরুষের বুকেই আছে আণবিক অক্সিজেন। তবে তার কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া কালপুরুষ যেহেতু একটি নেবুলা, তাই তার মধ্যে অক্সিজেনের উপস্থিতি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রায় পরিণত একটি ছায়াপথের মধ্যে অক্সিজেন অণুর উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি আগে। আর সেই পরিমাণটাও কালপুরুষের মধ্যে থাকা অক্সিজেনের আনুমানিক পরিমাণের অন্তত ১০০ গুণ। এই পর্যবেক্ষণ যদি সঠিক হয়, তাহলে ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের আরও অনেক অজানা তথ্য জানা সম্ভব হবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আর কোনোদিন যে সেখানেই প্রাণ ধারণের অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠবে না, তাই বা কে বলতে পারে?