২০ বছরে প্রথমবার শিশুশ্রমিকের সংখ্যাবৃদ্ধি, উদ্বেগে ইউনিসেফ

২০২০ সাল সমস্তদিক থেকে পৃথিবীকে কঠিন পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অতিমারীর প্রভাবে ভেঙে পড়েছে সমস্ত দেশের অর্থনীতি। আর এই সুযোগেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে শিশুশ্রমের প্রথাও। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন এবং ইউনেসেফের যৌথ সমীক্ষায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর এই তথ্য। ১২ জুন আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম বিরোধী দিবসকে সামনে রেখে প্রকাশ করা হয়েছে এই রিপোর্ট। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৮ মিলিয়ন। শুধু তাই নয়, বিগত ২০ বছরের মধ্যে এই প্রথম বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

করোনা অতিমারীর কারণে লকডাউন শুরু হতেই বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত স্কুল। এক বছর পেরিয়ে গিয়েও বেশিরভাগ দেশে শিক্ষাব্যবস্থা থমকে রয়েছে। অনলাইন পড়াশোনার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত অধিকাংশ পড়ুয়া। সেইসঙ্গে হানা দিয়েছে প্রবল আর্থিক সংকট। অভিভাবকদের অনেকেরই রোজগার বন্ধ। স্থায়ী জীবিকা ছেড়ে তাঁরা নিজেরাও যোগ দিচ্ছেন নির্মাণ প্রকল্পে বা অন্যান্য নানা অস্থায়ী কাজে। সেইসঙ্গে তাঁদের সন্তানরাও যোগ দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সরকার শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই অভিযোগ তুলছে ইউনিসেফ।

২০০০ সালে সারা পৃথিবীজুড়ে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২৪৬ মিলিয়ন। সেই বছর থেকেই শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার শুরু করে ইউনিসেফ। ফলস্বরূপ প্রতি বছর সংখ্যাটা একটু একটু করে কমতে থাকে। ২০১৬ সালে সংখ্যাটা এসে দাঁড়ায় ১৫২ মিলিয়নে। এরপর আর সেভাবে হ্রাস না পেলেও কোনো বছরই সংখ্যা বাড়েনি। কিন্তু ২০২০ সালে ১৬০ মিলিয়ন শিশুশ্রমিকের তথ্য এসে পৌঁছয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের হাতে। আর এর পরেই শুরু হয় আলোচনা।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালকে আন্তর্জাতিক শিশুশ্রমিক বিরোধী বছর হিসাবে ঘোষণা করেছে জাতিপুঞ্জ। সেইসঙ্গে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম সম্পূর্ণ বিলোপ করার লক্ষমাত্রাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কাজটা মোটেও সহজ নয় বলে মনে করছেন ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, শিশুশ্রম ঘৃণ্য প্রথা হলেও আজ বিশ্বের বহু শিশুর কাছে সেটাই বেঁচে থাকার সম্বল। করোনা পরিস্থিতি সমস্যাটি আরও ঘনিয়ে তুলেছে। গতবছরের চেয়ে এ-বছর অর্থনীতির অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও শিশুশ্রমিকের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সামগ্রিকভাবে সরকারি ও বেসরকারি পরিসরে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে এখনও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন
শিশুদের মধ্যে করোনা-সচেতনতা বাড়াতে পথে ‘জোকার’

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মহামারীতে অভিভাবকহীন ৪৩ হাজার মার্কিন শিশু

More From Author See More