“অনেকেই হয়তো মনে করছেন, এটাই আমাদের এবার দুর্গাপুজোর চমক। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে চমক হিসাবে ভাবতে রাজি নই একেবারেই। প্রতি বছরের মতো এবারেও নিশ্চই আমাদের পুজোর কোনো বিশেষ আকর্ষণ থাকবে, সেটা নিয়ে আমরা ভাবনাচিন্তাও করব। কিন্তু মহিলা পুরোহিতদের দিয়ে পুজো করানোর বিষয়টা একেবারেই লিঙ্গসাম্যের ভাবনা থেকে এসেছে। এটা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা।” বলছিলেন ৬৬ পল্লী সার্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায়। হ্যাঁ, এই প্রথম কলকাতা শহরের কোনো বারোয়ারি দুর্গাপুজোয় পৌরোহিত্য করবেন মহিলা পুরোহিতরা। আর সেই দায়িত্ব নিয়েছেন পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিক এবং তাঁর দল।
“গতবছর শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রয়াত হয়েছেন আমাদের এতদিনের পুরোহিত। সেই জায়গা থেকেই নতুন কাউকে ভাবা হচ্ছিল। নন্দিনীদির নাম আমাদের ভাবনায় আগে থেকেই ছিল।” বলছিলেন প্রদ্যুম্নবাবু। আসলে দুর্গাপুজো তো মায়ের পুজো। আর এই পুজোর যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও থাকেন মহিলারাই। সেখানে পৌরোহিত্যের কাজ শুধু পুরুষরা করবেন কেন? এই অচলায়তনটাই ভাঙতে চাইছেন ৬৬ পল্লীর পুজো কমিটির আয়োজকরা। প্রদ্যুম্নবাবুর কথায়, “আজকাল নানা কাজেই মহিলারা এগিয়ে এসেছেন পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে। প্রতিমা তৈরি থেকে তার সাজ তৈরি, সবই করেন মহিলারা। এমনকি মহিলা ঢাকী পাওয়াও আর অসম্ভব নয়। কিন্তু দুর্গাপুজোর পৌরোহিত্যের কাজেও তাঁদের জুড়ে নেওয়া এই সময়ের দাবি।”
নন্দিনী ভৌমিক অবশ্য গত প্রায় এক দশক ধরে নানা ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করে আসছেন। বিয়ের আয়োজন দিয়ে পথচলা শুরু। সেখান থেকে পারলৌকিক ক্রিয়া, অন্নপ্রাশন, উপনয়ন এমনকি সরস্বতী পুজোও সামলেছেন। আর প্রতিটা কাজে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন রুমা, সেমন্তী এবং পৌলমী। এবারের দুর্গাপুজোতেও থাকবেন তাঁরা চারজনেই। আর এভাবেই একটা ইতিহাস তৈরি হবে বলে আশাবাদী প্রদ্যুম্নবাবু। ইতিমধ্যে পরিচিত মহলে যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন তাঁরা। তাছাড়া শুরুর দিনগুলোতে নন্দিনী ভৌমিক এবং তাঁর সহকর্মীদের যথেষ্ট সমালোচনার মুখে পড়তে হলেও ক্রমশ ছবিটা বদলেছে। তবু বারোয়ারি দুর্গাপুজোয় তাঁদের সঙ্গে নেওয়ার কথা আগে কোনোদিন ভাবেননি কোনো আয়োজক। ৬৬ পল্লীর এই আয়োজন থেকে যদি বাকিরাও এমন উদ্যোগ নেয়, নন্দিনী ভৌমিকের মতোই আরও অনেক মহিলা যদি এগিয়ে আসেন পৌরোহিত্যের কাজে, তাহলেই এই উদ্যোগ সফল হবে বলে মনে করছেন প্রদ্যুম্নবাবু।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
১০৫ বছরে প্রথমবার, জুওলজিক্যাল সার্ভের শীর্ষপদে কোনো মহিলা