প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশনে স্বেচ্ছামৃত্যু, সায় লাতিন আমেরিকার এই দেশের

অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই। অবশেষে ‘জয়’ এল তাঁর। হাসি মুখেই নিজের পরিবারকে বিদায় জানালেন কলোম্বিয়ার (Columbia) ব্যক্তি। শরীরে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন (Euthanasia) প্রবেশের কয়েক মুহূর্তের পরেই থেমে গেল তাঁর হৃদস্পন্দন। 

ভিক্টর এস্কোবার (Victor Escobar)। সম্প্রতি কলোম্বিয়ার ৬০ বছর বয়সী এই ব্যক্তির স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছেকে ছাড়পত্র দিয়েছিল কলোম্বিয়া প্রশাসন। গতকাল চিরমুক্তির স্বাদ পেলেন তিনি। কলোম্বিয়ায় এমন ঘটনা এই প্রথম। 

আত্মহনন কিংবা স্বেচ্ছামৃত্যু আদৌ যুক্তিযুক্ত কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে গোটা বিশ্বজুড়েই। তবে বিশেষ-বিশেষ শর্তে, ইউরোপের বহু রাষ্ট্রই আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে মানুষের স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছেকে। এবার দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর সেই তালিকায় নাম লেখাল কলোম্বিয়াও। চিলির পরে ল্যাটিন আমেরিকার দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসাবে স্বেচ্ছামৃত্যুকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিল আন্দিয়ান দেশটি।

আজ থেকে প্রায় আড়াই দশক আগের কথা। ১৯৯৭ সালে আইন করে কলোম্বিয়া সরকার নিষিদ্ধ করেছিল স্বেচ্ছামৃত্যুকে। যদিও সাংবিধানিক আদালতের বিশেষ কমিটি স্বেচ্ছামৃত্যুকে বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে আমল দেয়লি সরকার। তা নিয়েই দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই কলোম্বিয়ায় রীতিমতো মানবাধিকার আন্দোলন চলেছে স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য। শেষ পর্যন্ত সেই আন্দোলনেই জয় আসে। ২০২১ সালে শিলমোহর বসে স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকারে। অবশ্য বিশেষ কিছু শর্তসিদ্ধ না হলে এই আদালতের তরফ থেকে ছাড়পত্র পাবেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। 

আরও পড়ুন
স্বেচ্ছামৃত্যুকে স্বীকৃতি স্পেনের, পার্লামেন্টে পাশ হল আইন

ভিক্টর এস্কোবারের শারীরিক অবস্থা যাচাই করার পর, তাঁকে সম্প্রতি এই ছাড়পত্র প্রদান করে কলোম্বিয়া প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন ভিক্টর। সেরে ওঠার কোনো সম্ভাবনাই নেই তাঁর— এমনই নিদান দিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকও। হুইলচেয়ার আর অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু এভাবে বেঁচে থাকার সত্যিই কি অর্থ রয়েছে কোনো? এই যন্ত্রণাযাপন যেন সাক্ষাৎ নরকবাস। পরিবারের কাছেও তা সুখকর নয় মোটেই। এমন পরিস্থিতিতে পৃথিবী থেকে সরে যেতে চেয়েছিলেন ভিক্টর। ইউথানেশিয়া ইঞ্জেকশনে থেমে গেল তাঁর জীবনযাত্রা। পরিবার-প্রিয়জনদের হাসি মুখে বিদায় জানিয়েই প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন শরীরে প্রবেশ করান ভিক্টর। 

আরও পড়ুন
মৃত্যুর জন্য আকুতি বনাম ‘মাই ডেথ মাই চয়েস’ – ভারতে স্বেচ্ছামৃত্যুর ‘অধিকার’ ঠিক কেমন?

শুধু স্বেচ্ছামৃত্যুর আইন পরিবর্তনই নয়। আরও একটি আঙ্গিকে এক নতুন নজির গড়ল কলোম্বিয়ার এই ঘটনা। প্রথা ভেঙে সর্বপ্রথম কোনো ক্যাথলিক রোমানকে স্বেচ্ছামৃত্যুর ছাড়পত্র দিল কলোম্বিয়া। অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামের মতো দেশে স্বেচ্ছামৃত্যু আইনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত চলে আসছে ধর্মের। ক্যাথলিক মতে স্বেচ্ছামৃত্যু ধর্মবিরুদ্ধ। তাই আইন থাকলেও স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার থেকে বঞ্চিত হন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীরা। এবার সেই রীতি ভেঙেও নতুন যুগের সূচনা হল কলোম্বিয়ায়…

Powered by Froala Editor