পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ যখন টেলিফোনে খবরটা জানালেন, তখন হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছিলেন সিনেমার নায়িকা আজমেরী হক বাঁধন। সাংবাদিকদের সামনে অকপটে স্বীকার করেছেন সে-কথা। খবরটা কী? এই প্রথম কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশন হিসাবে জায়গা পেতে চলেছে বাংলাদেশের কোনো সিনেমা। আর এই ঐতিহাসিক সিনেমাটি সাদের দ্বিতীয় পূর্ণ দৈর্ঘের চলচ্চিত্র ‘রেহানা মারিয়াম নূর’। কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘আন-সার্টেন রিগার্ড’ বিভাগে প্রদর্শিত হবে সিনেমাটি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এক মহিলা শিক্ষিকার জীবন ঘিরে আবর্তিত হয়েছে সিনেমার কাহিনি। শিক্ষিকার নামেই সিনেমার নাম। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া তো আছেই। একদিকে সন্তানের প্রতিপালন, আবার ক্লাসরুমে শিক্ষিকার ভূমিকায় রেহানা। আবার তিনিই অ্যাপ্রন চাপিয়ে রোগীর চিকিৎসাও করেন। এমনিতে তাঁর নিজের জীবন নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু কলেজেরই এক ছাত্রীর নিগ্রহের ঘটনার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন রেহানা। তাঁর চোখের সামনেই ঘটেছে পুরো ঘটনা। অথচ কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসন, কেউই অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। এখান থেকেই গল্পের মোড় ঘুরে যায়। উঠে আসে সমসাময়িক বাস্তবতার ছবি।
২০১৬ সালে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’-র পর এটি সাদের দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘের ছবি। সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন। অন্যান্য চরিত্রে দেখা গিয়েছে আফিয়া জাহিন, কাজি সামি হাসানকে। প্রথম ছবিতেই সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন সাদ। আর দ্বিতীয় ছবিতেই স্বীকৃতি মিলল বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতনামা চলচ্চিত্র উৎসব থেকে। বাঁধনের মতে, এই কৃতিত্বের পুরোটাই সাদের পাওনা। তাঁর দক্ষ পরিচালনার জোরেই জীবন্ত হয়ে উঠেছে প্রতিটা চরিত্র। পাশাপাশি এই সাফল্য গোটা বাংলাদেশের কাছে গর্বের বলেই মনে করছেন ইউনিটের সকলেই। এর আগে ২০০২ সালে পরিচালক তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ছবিটি ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইট বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে। কিন্তু অফিসিয়াল সিলেকশনের স্বীকৃতি পায়নি বাংলাদেশের কোনো সিনেমাই। তাই সত্যিই এক ইতিহাস তৈরি করল ‘রেহানা মারিয়াম নূর’।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সিনেমা নির্মাণের শেষে মৃত্যু নায়কের, হত্যা-মামলায় অভিযুক্ত প্রযোজক!