“Mr. Watson please come here, I want you”
না, শার্লক হোমসের কোনো কেসের কথা হচ্ছে না। এই বাক্যটি যার মুখ থেকে বেরিয়েছিল, তাঁকে ইতিহাস একডাকে চেনে। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। টেলিফোনের জনক। টেলিফোনের মাধ্যমে পৃথিবীতে সবার প্রথমে এই কথাটিই বলা হয়েছিল। এক জায়গা থেকে বহু দূরের আরেক জায়গায়, না গিয়েই কথা বলা যাবে— এমন ‘অদ্ভুত ঘটনা’র কথা তখনকার দিনে কেউই শোনেনি। কাজেই সব জায়গাতেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল এই খবর।
বাদ যায়নি কলকাতাও। তবে এক্ষেত্রে খানিক অন্যরকম তথ্য আমরা পাই। ইতিহাস বলে, ১৮৮১ সালে প্রথম কলকাতায় টেলিফোনের মাধ্যমে কথা বলা ও শোনা হয়। কিন্তু আসল ব্যাপার হল, এর পাঁচ বছর আগে, ১৮৭৭ সালেই কলকাতায় টেলিফোনের সাহায্যে প্রথম কথোপকথন হয়েছে। আর ১৮৮১ সালে ওরিয়েন্টাল টেলিফোন কোম্পানি প্রথম কলকাতায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপন করে।
আরও পড়ুন
শতবর্ষ আগে ভিক্টোরিয়ার চূড়ায় নেমে এসেছিল পরী, ঘুরে-ঘুরে দেখত গোটা কলকাতা
যে কাজটা এক সময় গ্রাহাম বেল করেছিলেন, এখানে ঠিক সেটাই করেন লিউক সাহেব। সার্ভেয়ার জেনারেল অফিসের টেলিগ্রাফ বিভাগে কাজ করতেন। এখানেই তৈরি হয় শহরের প্রথম টেলিফোন। সেই সময়ের, অর্থাৎ ১৮৭৭ সালের সমাচার দর্পণে এর প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছিল - “সম্প্রতি বিলাতে টেলিফোন নামক এক প্রকার নূতন যন্ত্র আবিষ্কার হইয়াছে। ইহা এক দেশ হইতে ভিন্ন দেশ পর্যন্ত স্থাপিত করিয়া যন্ত্রের মুখে কথা কহিলে ভিন্ন দেশের শ্রোতা অবিকল তাহা শুনিতে পান। সম্প্রতি আলিপুরের টেলিগ্রাফ কারখানায় এইরূপ যন্ত্র নির্মিত হইয়াছে।”
ঠিক এর কয়েকদিন পরেই, সার্ভেয়ার অফিস আর ফোর্ট উইলিয়ামের মধ্যে টেলিফোন আদানপ্রদান হয়। দিনটি ছিল ১৮৭৭ সালের ২৯ নভেম্বর। সর্বপ্রথম কথা বলেছিলেন লিউক সাহেবই। পরে সেটারও প্রতিবেদন বেরিয়েছিল। ওই মুহূর্তেই ইতিহাসের পাতায় জুড়ে যায় কলকাতা।
আরও পড়ুন
১৯২১ সালেই মেট্রো রেলের পরিকল্পনা কলকাতায়, গঙ্গার নিচ দিয়ে ছুটবে ট্রেন!
সত্যিই কি ইতিহাসে জুড়েছে? নাহলে ১৮৭৭ সালকে অগ্রাহ্য করে কীভাবে উঠে আসে ১৮৮১? লিউক সাহেবের নামও চাপা পড়ে যায় এর মধ্যে। ইতিহাস যেমন সত্য বলে, তেমনই বেশ কিছু সত্য আড়ালও করে। কলকাতার টেলিফোন ইতিহাস সেই হতভাগ্যের দলেই পড়ে গেল। তখনকার সেই ফোন, আজ প্রযুক্তির হাত ধরে আমূল বদলেছে। কিন্তু ইতিহাসকে ঠিক করার কথা কেউ ভাবেনি…
সূত্র - কলির শহর কলকাতা / হরিপদ ভৌমিক