আকাশের বুক চিরে সোজা এগিয়ে গেছে একটা সাদা ধোঁয়াটে দাগ। তার সামনে একটা কালো ছোট্ট বস্তু। বাড়ি ফেরার পথে, কিংবা খেলতে খেলতে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই এই ব্যাপারটা দেখেছি। সেই ছোট্ট কালো মতন বস্তুটা যে একটা সুপারসনিক জেট প্লেন, সেটাও এতদিনে জেনে গেছি সবাই। কল্পনায় কেউ কেউ সেটায় চড়ে পাড়িও দিয়েছে। চাক ইয়েগারের কল্পনায় অবশ্য জেট প্লেন আসেনি। বরং বাস্তবে সেই প্লেনে মোকাবিলা করেছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। তিনিই প্রথম সুপারসনিক জেটের পাইলট। তবে এবার সেই ইতিহাসের ইতি ঘটল। ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যু হল চাক ইয়েগার-এর।
১৯২৩-এ কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া চাক ইয়েগার আঠেরো বছর বয়সে আমেরিকার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সময়টা বড় সুখের ছিল না তখন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যে আমেরিকা ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে। সেই সময়ই চাকের যুদ্ধবিমান ওড়ানোর প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ১৯৪৭-এর অক্টোবরে আমেরিকার বেল কোম্পানি নিয়ে আসে প্রথম সুপারসনিক জেট, যা শব্দের থেকেও নাকি বেশি জোরে যাবে। সেই প্লেন ওড়ানোর গুরুদায়িত্ব পড়ল বছর চব্বিশের তরুণ চাকের হাতে। ১৪ অক্টোবর, ১৯৪৭। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিন। প্রথমবার আকাশে দেখা দিল সেই সাদা লম্বা ধোঁয়ার লাইন। উড়ল প্রথম সুপারসনিক জেট। আর সেই ইতিহাসের অন্যতম কাণ্ডারি হয়ে থাকলেন চাক ইয়েগার।
শুধুই একজন দক্ষ পাইলট নন, চাক ইয়েগার ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান প্রেমিকও। জীবন যখন অনিশ্চিতের ডাক ডেকে নিল, তখন স্ত্রীর নামে বিমানের নাম রেখেছিলেন গ্ল্যামারাস গ্লেনিস। তবে শেষ পর্যন্ত অ্যাডভেঞ্চারের শেষে ফিরেও এসেছিলেন সুখী গৃহকোণে। চাকের মৃত্যুসংবাদ জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী গ্লেনিস। বৈবাহিক জীবনের স্মৃতি উস্কে দিয়ে গেল জীবনের শেষ কয়েকটা দিন। তাঁর স্ত্রীর কাছে এখনও তিনিই আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো পাইলট।
মার্কিন বিমানবাহিনীর অন্যতম কিংবদন্তি নাম চাক। সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে পরবর্তীকালে আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাভিয়েশন হল অফ ফেমে জায়গা করে নেন তিনি। আজ, ৯৭ বছর বয়সে এসে আকাশের গায়ে শেষ কালো বিন্দুটির মতো মিলিয়ে গেলেন চাক।
Powered by Froala Editor