রেস্টুরেন্টের ওয়েটার হোক বা অরণ্য সুরক্ষাকর্মী, নানা কাজেই আজকাল নিয়োগ করা হয় রোবটদের। মানুষের চেয়ে তারা কোনো অংশে কম তো নয়ই, বরং অনেক ক্ষেত্রে আরও ভালোভাবে সেই কাজ সম্পন্ন করতে পারে। কিন্তু কোনো রোবট ছবি আঁকছে, বা কবিতা লিখছে এমনটা শুনেছেন কি? হ্যাঁ, মাত্র ২ বছর আগে বিজ্ঞানীরা তৈরি করে ফেলেছেন এমনই একটি রোবট। শুধু তাই নয়, এই দু-বছরে তার ছবি আঁকার হাত যথেষ্ট পাকা হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি নিজের একটি আত্মপ্রতিকৃতিও এঁকে ফেলেছে আই-ডা। পৃথিবীর প্রথম চিত্রশিল্পী রোবট।
২০১৮ সালে ব্রিটিশ গ্যালারি আর্টিস্ট আইডান মেলারের উদ্যোগে কাজ শুরু করেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। টানা এক বছরের চেষ্টায় অবশেষে ২০১৯ সালে তৈরি হয় আই-ডা। ঠিক মানুষের মতোই দেখতে এই রোবট। আরও ভালোভাবে বললে, তার মুখের আদল তৈরি করা হয়েছে বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ আডা লাভলেসের মুখের আদলে। চার্লস ব্যাবেজের গবেষণার উপর দাঁড়িয়ে তিনিই প্রথম প্রমাণ করেছিলেন কম্পিউটারের মধ্যেও আছে অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন। এই রোবট আসলে তাঁর সেই যুগান্তকারী গবেষণার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ।
প্রথম প্রথম অতিপ্রাকৃতিক ছবির চেয়ে বেশি কিছু আঁকতে পারত না আই-ডা। কারণ তার যান্ত্রিক হাত তত সূক্ষ্ম হয়ে ওঠেনি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষণ পেয়ে আজ সে যথেষ্ট পটু। তার ছবি আঁকার হাত এতটাই নিখুঁত যে নিজের আত্মপ্রতিকৃতিও এঁকেছে আই-ডা। সেই আত্মপ্রতিকৃতি এবং আরও বেশ কিছু মানুষের প্রতিকৃতি নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আয়োজিত হতে চলেছে একটি প্রদর্শনী। আই-ডা জানিয়েছে এক একজন মানুষের সম্পূর্ণ প্রতিকৃতি আঁকতে তার সময় লাগে মাত্র ৪৫ মিনিট থেকে ৭৫ মিনিট। শুধুই ছবি আঁকা নয়, মূর্তি তৈরি এমনকি কবিতা লেখাতেও দক্ষ হয়ে উঠেছে আই-ডা। গত জুলাই মাসে একটি মিউজিক ভিডিওতে আই-ডাকে দেখা যায় তার নিজের লেখা কবিতা পাঠ করতে।
তবে ইতিমধ্যে এই হিউম্যানয়েড রোবটের সাফল্য নিয়ে প্রযুক্তিবিদরা যেমন উচ্ছসিত, তেমনই আশঙ্কার মেঘ জমা হয়েছে বহু শিল্পীর মধ্যে। আইডান মেলার জানিয়েছেন, তাঁর সহকর্মীরা প্রত্যক্ষ দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। একদল মনে করছেন এই আবিষ্কার সত্যিই যুগান্তকারী। অন্যদলের আশঙ্কা, এবার হয়তো শিল্পীদের কাজের পরিসরটাও দখল করে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে মেলারের মতে, এই দুই মতই আসলে যথেষ্ট একপাক্ষিক। তাঁর মতে, যখন ক্যামেরা আবিষ্কার হয়েছিল তখনও কিছু শিল্পী গেল গেল রব তুলেছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ ফটোগ্রাফিই শিল্পের এক নতুন মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃত। আগামীদিনে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে রোবট অনেক কিছুই করবে। আজ হোক বা কাল, শিল্পী রোবটের জন্মও হত। কিন্তু এই আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে শিল্পের জগতে ঠিক কতটা পরিবর্তন ঘটতে পারে, সেটাই দেখতে চান মেলার। তিনি চান, এই নিয়ে আরও বেশি করে চর্চা হোক। যত যাই হোক, আই-ডা শেষ পর্যন্ত একটি যন্ত্র মাত্র। তার নিজের কোনো বোধশক্তি নেই। কিন্তু মানুষের বোধশক্তির উপর নির্ভর করেই সে অসাধ্য সাধন করতে পারে।
আরও পড়ুন
ব্যাঙের কোষ দিয়ে তৈরি হল পৃথিবীর প্রথম ‘জীবন্ত’ রোবট
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মাছের মতো দেখতে রোবট, সমুদ্রে পরিবেশ রক্ষার নয়া সেনানী?