‘প্রতিরক্ষা বিভাগ মহিলাদের কর্মক্ষেত্র নয়।’ এমন প্রবাদবাক্যের যে কোনো যৌক্তিকতা নেই, তা তৎকালীন সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন ডঃ বিজয়লক্ষ্মী রামানন। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম মহিলা কমিশনড অফিসার। ৯৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন এই কিংবদন্তি। বার্ধক্যজনিত কারণেই অসুস্থ ছিলেন বেশ কিছুদিন ধরেই। বেঙ্গালুরুতে গত রবিবার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বিজয়লক্ষ্মীর জীবনের শুরুটা হয়েছিল একটু অন্যভাবেই। মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৪৩ সালে। সেখান থেকে ১৯৪৮ সালে এমবিবিএস পাস করেন বিজয়ালক্ষ্মী। পেয়েছিলেন স্বর্ণপদকও। তাছাড়াও মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অস্ত্রোপচার বিষয়ে পেয়েছিলেন বিশেষ বেলফোর মেমোরিয়াল মেডেল।
বাবা ছিলেন বিশ্বযুদ্ধ ফিরত সৈনিক। বিজয়লক্ষ্মীর অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনিই। ১৯৫৫ সালেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন বিজয়লক্ষ্মী। স্বাভাবিক চিকিৎসার পথ ছেড়েই বেছে নেন বিমান বাহিনীর চাকরি। প্রথমে শর্ট সার্ভিস কমিশন। পরে পদোন্নতি হয়ে বায়ুসেনায় প্রথম মহিলা কমিশনড অফিসার হন তিনি। দীর্ঘ ২৪ বছর কাজ করেছেন বায়ুসেনার হয়ে। ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭২-এর যুদ্ধে বায়ুসেনার চিকিৎসক এবং নার্স হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বিজয়লক্ষ্মী।
গাইনোকোলজিস্ট হিসাবে একাধিক হাসপাতালে কাজ করেছেন তিনি। এর বাইরেও সামলেছেন প্রশাসনিক দায়িত্ব। পাশাপাশি নার্সিংয়ের শিক্ষকতাও।
বায়ুসেনা থেকে বিজয়লক্ষ্মী অবসরগ্রহণ করেন ১৯৭৯ সালে। তারপরেও বিভিন্নভাবেই যুক্ত ছিলেন বায়ু সেনাবাহিনীর সঙ্গে। চাইতেন আইএফএ পুরুষনির্ভরতা কাটিয়ে জায়গা করে দিক মহিলাদেরও। আইএএফের মহিলা কমান্ডারদের পোশাকের নকশাও বানানো তাঁরই হাতে। ভারতীয় প্রতিরক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিশিষ্ট সেবা মেডেলও পেয়েছেন তিনি রাষ্ট্রপতির থেকে।
প্রতিরক্ষা বিভাগের পথ বেছে নেওয়ায় মহিলাদের অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিলেন বিজয়লক্ষ্মী। পাশাপাশি বায়ুসেনায় তাঁর উপস্থিতি ছিল অনেকটা অভিভাবকের মতোই। তাঁর প্রয়াণে ফাঁকা হয়ে গেল সেই জায়গাটাই...
আরও পড়ুন
প্রয়াত বাচিকশিল্পী প্রদীপ ঘোষ, সংস্কৃতিমহলে শোকের ছায়া
Powered by Froala Editor