মঙ্গলে হেলিকপ্টার ওড়াবেন বাঙালি-সহ তিন ভারতীয়, ইতিহাসে প্রথম

অবসান হতে চলেছে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার। আর যত এগিয়ে আসছে সময়, ততই যেন বাড়ছে চাপানউতোর। সত্যিই উড়তে পারবে তো হেলিকপ্টার? অনেকেরই মনে হতে পারে, হেলিকপ্টার ওড়ানোর আর নতুন কী আছে? তবে বিষয় হল যে কপ্টারের কথা হচ্ছে, তা যে সে কপ্টার নয়। তৈরি হয়েছে খোদ মঙ্গলের জন্য। উড়বে প্রতিবেশী লালগ্রহের আকাশেই। তবে সারা বিশ্ববাসীই এর ঐতিহাসিক দৃশ্যের অপেক্ষায় থাকলেও বাঙালি তথা ভারতীয়দের আগ্রহ, চিন্তা একটু বেশিই। কারণ পুরো প্রকল্পের পিছনেই লুকিয়ে রয়েছে ২ বাঙালি-সহ ৩ ভারতীয় গবেষক।

‘ইনজেনুইটি’ নামের এই বিশেষ কপ্টারটি নির্মাণের পিছনে রয়েছেন বব বলরাম। পুরো প্রজেক্টের চিফ ইঞ্জিনিয়ার তিনি। নাসার সঙ্গে কাজ করছেন প্রায় ৩৬ বছর। তাছাড়াও দুই বাঙালি গবেষক অনুভব দত্ত ও সৌম্য দত্ত জড়িয়ে রয়েছেন এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। মঙ্গলে কপ্টার ওড়ানোর প্রথম পরিকল্পনাই এসেছিল গবেষক অনুভব দত্তের মাথা থেকে। বছর তিরিশেক আগের কথা। অনুভবের এই প্রস্তাব তখন অনেকেই নিয়েছিল মজার ছলে। কিন্তু কে জানত মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোডাইনামিক্সের বাঙালি গবেষকের সেই নীল নকশাই ভাষা পাবে একদিন? অন্যদিকে বর্ধমানের বঙ্গসন্তান সৌম্য দত্ত ভার্জিনিয়ার নাসার রিসার্চ সেন্টারের এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার।

নাসার তত্ত্বাবধানেই সম্পন্ন হচ্ছে গোটা প্রজেক্টটি। নাসার ‘পারসিভারেন্স’ রোভার প্রজেক্টের বৃহত্তর অংশ প্রতিবেশী গ্রহে এই হেলিকপ্টার প্রেরণ। গত ৩০ জুলাই পৃথিবী থেকে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল ইনজেনুইটি। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করবে পারসিভারেন্স রোভার। আর তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আকাশে উড়বে হেলিকপ্টার। পরিকল্পনা এমনই। 

মঙ্গলপৃষ্ঠে রোভারটি অবতরণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে একটি প্যারাসুটও। গোটা ব্যাপারটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে ওপর থেকে শুনে, তেমনটা নয় একেবারেই। প্রথমত মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে বায়ুর ঘনত্ব এতটাই কম যে, সেখানে স্বাভাবিক উড়ান এককথায় অসম্ভব। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ৩০ হাজার ফুট ওপরে উড়তে পারা আর মঙ্গলের আকাশে উড়ান প্রায় একই। তবে তার জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত করেছেন ভারতীয় গবেষকরা। ভেতরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ভ্যাকিউম চেম্বার। যা ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করবে এই হেলিকপ্টারকে। আর এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই সফলভাবে উতরে গেছে পৃথিবীর বুকে তৈরি একইরকম সিমুলেশন পরীক্ষাগারে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি এক মাসের মধ্যে পাঁচবার মঙ্গলের আকাশে উড়বে ইনজেনুইটি। প্রতিবার দেড় মিনিটের প্রদক্ষিণ করে নেমে আসবে আবার। কপ্টারের মধ্যেই লাগানো রয়েছে ক্যামেরা। মাথার ওপরে দুটি রোটর। মঙ্গলপৃষ্ঠ থেকে সর্বাধিক ১০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে এই ১.৮ কিলোগ্রামের মিনি হেলিকপ্টারটি। উল্লেখ্য, এর আগে পৃথিবীর বাইরে আর কোনো গ্রহে বা উপগ্রহে ওড়ানো হয়নি হেলিকপ্টার। কাজেই ভারতীয় গবেষকরা এই কর্মকাণ্ড সফল হলে তা লেখা হবে স্বর্ণাক্ষরে…

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মঙ্গলের লবণাক্ত জল থেকেই মিলবে অক্সিজেন, নয়া পদ্ধতি আবিষ্কার ভারতীয় বিজ্ঞানীর

Latest News See More