গতকাল সকালে সৌদি আরবের বুকে তৈরি হল এক নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের জন্য সৌদি আরবের বুকে আয়োজিত হল গ্র্যান্ড প্রিক্স রেসিং। বহু বিতর্ক পেরিয়ে রিয়াধ শহরের রাস্তায় নামল ফর্মুলা ওয়ান গাড়ি। তবে তার থেকেও বেশি নজর কেড়েছে ফর্মুলা ওয়ান (F1 Race) রেসার সেবেস্তিয়ান ভেটেল (Sebastian Vettel)। তাঁর সাদা পোশাকের গায়ে রামধনু রঙের ব্যান্ড আঁকা। মাথার হেলমেটটিও ছিল রামধনু রঙের। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ না হলেও নিজেকে সমকামী এবং রূপান্তরকামী মানুষদের লড়াইয়ের সঙ্গী বলে পরিচয় দেন সেবেস্তিয়ান। আর সৌদি আরবের মাটিতে সেই লড়াইয়ের বার্তাই দিলেন তিনি। এমন একটি দেশে, যেখানে এখনও সমকামিতা এবং রূপান্তরকামিতা সবচেয়ে বড়ো অপরাধগুলির একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। গ্রান্ড প্রিক্সের আয়োজন যেন আরবের সংস্কৃতির এই দিকটাকেই উলটে দেওয়ার বার্তা নিয়ে এল।
পৃথিবীর সবচেয়ে রক্ষণশীল এবং মধ্যযুগীয় আইন ব্যবস্থার জন্য কুখ্যাত সৌদি আরব। আজও সেখানে পর্দা প্রথা আইনস্বীকৃত। বরং পর্দা প্রথা ভেঙে বেরিয়ে আসা মহিলাদেরই অপরাধী হিসাবে কাঠগড়ায় তোলা হয়। আর রূপান্তরকামী ও সমকামীদের অস্তিত্বের অধিকারই নেই সৌদি আরবের আইনে। কেউ নিজেকে রূপান্তরকামী বা সমকামী বলে দাবি করলে তার শাস্তি হয় বেত্রাঘাত অথবা কারাদণ্ড। এমন একটা দেশে গ্র্যান্ড প্রিক্সের আয়োজন নিয়ে নানা বিতর্ক ছিল প্রথম থেকেই। তবে সেইসব বিতর্কের কাছে হার মানেননি অনুষ্ঠানের আয়োজক মোটরস্পোর্টস সাংবাদিক হেজেল সাউথওয়েল। বিগত ৩ বছর ধরে তিনি আরবে কাজ করছেন। মোটরস্পোর্টকেই সেখানে বিপ্লবের হাতিয়ার করে তুলেছেন।
২০১৮ সালের আগে সৌদি আরবের কোনো মহিলা গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেতেন না। প্রকাশ্য কোনো খেলাতেও যোগ দিতে পারতেন না তাঁরা। হেজেলের উদ্যোগে এখন দৃশ্যটা অনেকটাই বদলেছে। সৌদি আরবের বুকেও তৈরি হয়েছে মহিলাদের ফর্মুলা কার রেসারের দল। এবারের গ্র্যান্ড প্রিক্সেও অংশ নিয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশের মোট ৬ জন ফর্মুলা কার রেসার। আর তার সঙ্গে সেবাস্তিয়ানের উপস্থিতি তো ছিলই। প্রকাশ্য রাস্তায় এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন আরবের নিপীড়িত যৌনতার মানুষদের লড়াইয়ে উদ্দীপনা দেবে বলে আশাবাদী আয়োজক থেকে প্রতিযোগী— সকলেই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দেশের প্রথম এলজিবিটিকিউ ফুটবল দল, নেপথ্যে মণিপুরের সাদাম