পৃথিবীর প্রথম ব্রেইন সার্জারি ঘটেছিল হরপ্পায়, সাক্ষী ৬ হাজার বছরের পুরনো করোটি

বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতীয়রা যে অসাধারণ সাফল্যের পরিচয় রেখেছিলেন, সেকথা তো অনেকেরই জানা। চরক অথবা সুশ্রুতর মতো শল্য চিকিৎসক পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তবে ভারতে আর্যদের আগমনের অনেক আগেও যে শল্য চিকিৎসার উল্লেখযোগ্য নিদর্শন পাওয়া যায়, সেদিকে অনেকেই নজর রাখেন না। কেবল মামুলি কিছু চিকিৎসা নয়, ভারতের বুকে কঠিন ব্রেইন সার্জারির উদাহরণও পাওয়া গিয়েছে। আর সেটা সিন্ধু সভ্যতার সময়।

সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পা অঞ্চলে একটি সমাধি থেকে পাওয়া যায় এক শিশুর মাথার করোটি। গবেষকদের অনুমান, এই করোটির বয়স ৬ হাজার বছরেরও বেশি। আনুমানিক ৪৩০০ খ্রিস্টপূর্বে সমাধি দেওয়া হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। আর সেই করোটির মধ্যেই দেখা যায় বিশেষ একধরনের ক্ষত। ব্রোঞ্জ যুগে মস্তিষ্কের চিকিৎসায় যে ট্রিপানেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হত, এই ক্ষত সেই চিকিৎসা পদ্ধতির কারণেই ঘটেছে। আর এই আবিষ্কারের ফলে হয়তো নতুন করে মানব সভ্যতার ইতিহাস লেখার সময় এসে গিয়েছে।

মস্তিষ্কে রক্তের চাপ বৃদ্ধি পেলে অথবা বিভিন্ন স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিলে মস্তিষ্কের মধ্যে একটি ছোটো অস্ত্রপ্রচার করে চিকিৎসা করতেন ব্রোঞ্জ যুগের মানুষ। এই পদ্ধতিকেই বলা হয় ট্রিপানেশন। ঐতিহাসিকদের পুরনো তত্ত্ব অনুযায়ী, আনুমানিক খিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে ব্যাবিলনে এই পদ্ধতির সূত্রপাত। আর তারপর তা পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। তবে হরপ্পার নমুনা তার থেকে অনেক পুরনো। তাহলে কি ভারতের বুকেই এই পদ্ধতির জন্ম হয়েছিল?

ট্রিপানেশন পদ্ধতি অবশ্য শল্য চিকিৎসা ছাড়াও আরও অনেক কারণেই ব্যবহার করা হত বলে অনুমান করেন অনেকে। তবে এই মতের সপক্ষে উপযুক্ত যুক্তি তেমন নেই। পৃথিবীর নানা প্রান্তে শল্য চিকিৎসার এই প্রাচীন পদ্ধতিগুলির সাদৃশ্য দেখে সেইসময় আন্তর্জাতিক যোগাযোগের কথা বলেন অনেকে। তবে এই ধারণার উপরেও প্রশ্ন থেকে যায়। প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতা বা মায়া সভ্যতার মতো বিচ্ছিন্ন অঞ্চলেও প্রায় একই ধরনের পদ্ধতির জন্ম তাহলে ঘটেছিল কীভাবে? ইতিহাসের কাছে এমনই অনেক রহস্য জড়ো হয়ে আছে। সিন্ধু সভ্যতাও তো ইতিহাসের এক রহস্য। আর পৃথিবীর প্রাচীনতম ব্রেইন সার্জারির উদাহরণ যে পাওয়া যায় এই ভারতের বুকেই, এমন ঘটনা সত্যিই আশ্চর্য করে বৈকি।

More From Author See More

Latest News See More