সূর্যের গনগনে পৃষ্ঠদেশে ছড়িয়ে রয়েছে প্লাজমা। সেখান থেকে চৌম্বকীয় প্লাজমার তন্তুবৎ সূচ ছিটকে বেরিয়ে আসছে বাইরের দিকে। এক একটি চওড়ায় প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। এই সূচগুলির থেকেই জন্ম নেয় ভয়ঙ্কর সৌরঝড়। আবার এদের দৌলতেই দেখা মেলে মেরুজ্যোতির। গতবছর এই তথ্যের রহস্যভেদ হলেও, কোনো ছবি ছিল না এতদিন। তবে অপেক্ষার অবসান হল। এবার সূর্যপৃষ্ঠের আলট্রা এইচডি ছবি চমকে দিল বিজ্ঞানীদের।
এখনো পর্যন্ত তোলা সূর্যের ছবিগুলির মধ্যে সবচেয়ে কাছ থেকে তোলা ছবি এটিই। সাব-অর্বাইটাল স্পেস টেলিস্কোপের রাই রেসোলিউশন করোনাল ক্যামেরায় (Hi-C) তোলা হয়েছে এই ছবি। ছবিটিতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে সরু চুলের মতো চৌম্বকীয় প্লাজমার সুতো। তাদের অশান্ত প্রবাহ, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি করছে সূর্যপৃষ্ঠে। উষ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রায় দশ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।
সূর্যের এই আলট্রা এইচডি ছবিতে প্রথম চাক্ষুষ সন্ধান মিলল সৌরঝড়ের কণিকা-সদৃশ উপাদানগুলির। সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডলের গঠন এবং চরিত্র বুঝতে যা সাহায্য করবে ভবিষ্যতে।
এতদিন সূর্যের গহ্বরকে ফাঁকা বলেই মনে করতেন বিজ্ঞানীরা। অনুমান করা হত, সেখানের উষ্ণতা তুলনামূলকভাবে কম অন্যান্য অংশের থেকে। কিন্তু এই ধারণাকেও ভুল প্রমাণ করল করোনাল ক্যামেরা। উষ্ণতা কম তো নয়ই, বরং ওই গহ্বরে বৃহত্তর প্লাজমা তন্তুর আভাস পেলেন বিজ্ঞানীরা। অবিরাম প্রচণ্ড উষ্ণ এবং আয়নিত গ্যাসের প্রবাহ চলছে ওই জায়গায়। ছবির থেকে সূর্যের বাইরের পৃষ্ঠের আভার সৃষ্টির ভৌত কারণ পরিষ্কার। Hi-C প্রোজেক্টটি পরবর্তীকালে গবেষণার কাজ আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সূর্যের ব্যাপারে নতুন তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি, এই সৌরআভা পৃথিবীতে কী ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে, তারও হদিশ পাওয়া যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১২-তে তৈরি হয়েছিল এই Hi-C ক্যামেরা, নাসার ল্যাবরেটরিতে। সৌরবিজ্ঞানের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল এই ক্যামেরা। অত্যন্ত ক্ষমতাশালী এই টেলিস্কোপ, সৌরপৃষ্ঠে মাত্র ৭০ কিলোমিটার চওড়া জায়গার ছবি তুলতে পারে। যা সূর্যের মোট ক্ষেত্রের মাত্র ০.০১ শতাংশ। সূর্যের নাক্ষত্রিক আচরণ পর্যবেক্ষণের উপর বিজ্ঞানীরা এই ক্যামেরার উপরেই ভরসা করে আছেন। অন্যদিকে নিজের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সাব-অর্বাইটাল স্পেস টেলিস্কোপের এই করোনাল ক্যামেরা।