ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে তৈরি রক্ত, বিপ্লব আনবে চিকিৎসা জগতে

কোভিড মহামারীর সময় থেকেই একটু একটু দেখা দিয়েছিল রক্তের আকাল। লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন রক্তদানের প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় ক্রমশ শূন্য হয়ে এসেছিল দেশের রক্তভাণ্ডার। জরুরি ভিত্তিতেই তাই রক্ত সংগ্রহের কাজে নেমেছিলেন প্রতিরক্ষা কর্মী এবং সমাজকর্মীরা। এমনকি রক্তদানের প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছিলেন চিকিৎসকরাও। শুধু ভারতই নয়, বিশ্বের সমস্ত দেশেই দেখা দিয়েছিল এই সমস্যা। তার সমাধান হিসাবেই ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে রক্ত তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ গবেষকরা। এবার শুরু হল সেই কৃত্রিম রক্তের (Artificial Blood) ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (Clinical Trial)। 

উল্লেখ্য, মানবদেহে কৃত্রিম রক্তদানের ঘটনা বিশ্বে এই প্রথম। তবে বড়ো মাত্রায় নয়, রোগীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই অত্যন্ত স্বল্প পরিমাণ রক্তই প্রবেশ করানো হয়েছে মানবদেহে। স্পষ্ট করে বলতে গেলে কেবলমাত্র দু’-চামচ রক্ত। আসলে, রোগীর রক্তের গ্রুপের সঙ্গে, তাঁর শরীরে প্রবেশ করানো রক্তের গ্রুপ বা অ্যান্টিজেন এক না হলে দেখা দিতে পারে প্রাণসংশয়ের মতো ঘটনাও। সেই কারণেই সতর্কতা মেনে প্রবেশ করানো হয়েছে স্বল্প পরিমাণ কৃত্রিম রক্ত। এখন দেখার কৃত্রিমভাবে তৈরি এই অ্যান্টিজেন আদৌ মানবদেহের অ্যান্টিজেনের সঙ্গে মিশে যেতে পারে কিনা।

আশ্চর্য এই কৃত্রিম রক্ত তৈরি নেপথ্যে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁদের কথায়, সবমিলিয়ে চারটি পর্যায়ে ১০ জন রোগীকে দেওয়া হবে দু’-চামচ করে রক্ত। আগামী চার মাস ধরে চলবে সংশ্লিষ্ট রোগীদের পর্যবেক্ষণ। বলাই বাহুল্য, এই পরীক্ষা সফল হলে বিপ্লব আসবে চিকিৎসার জগতে। একদিকে যেমন রক্তের ভাণ্ডার তৈরি জন্য রক্তদানের ওপর নির্ভরতা কমবে, তেমনই বিরল রক্তের গ্রুপের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হবে আগামীদিনে। এ, বি, এবি এবং ও— এই চারটি গ্রুপের রক্ত সহজলভ্য হলেও, বিরল গ্রুপের রক্তের দাতা প্রায় পাওয়া যায় না বললেই চলে। অন্যদিকে গবেষকদের মতে, সাধারণ রক্তদাতার থেকে নেওয়া লোহিত রক্তকণিকার থেকে কৃত্রিম লোহিত রক্তকণিকা দীর্ঘস্থায়ী হয়। ফলে, অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় আক্রান্ত রোগীদের বার বার রক্ত পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়বে না, ল্যাবরেটরিতে তৈরি রক্ত দেওয়া হলে। এখন দেখার এই পরীক্ষা সফল হলে, কত দ্রুত বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় কৃত্রিম রক্তের… 

Powered by Froala Editor