বাল্যবিবাহ, এই একুশ শতকে দাঁড়িয়েও এক জ্বলন্ত সমস্যা। একদিকে সরকার পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও বিবাহের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার পরিকল্পনা নিচ্ছে, অন্যদিকে এখনও দেশের নানা প্রান্তে নিতান্ত কম বয়সে বিবাহ হয়ে যাচ্ছে কিশোরীদের। এর মধ্যেই নতুন উদাহরণ তৈরি করল ওড়িশার (Odisha) গঞ্জাম জেলা। রাজ্যের প্রথম বাল্যবিবাহমুক্ত (Child Marriage-free District) জেলার স্বীকৃতি পেল গঞ্জাম। মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়েছেন গঞ্জাম (Ganjam) জেলার জেলাশাসক বিজয় অমৃত কুলাঙ্গে।
২০২১ সালে গঞ্জাম জেলায় একটিও বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেনি। এবার সরকারিভাবে এমনটাই জানানো হল। বিজয় অমৃতের কথায়, এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে অসংখ্য সরকারি কর্মচারীর নিরলস পরিশ্রম। এবং অবশ্যই ‘নির্ভয়া কড়ি’-র মতো সচেতনতামূলক প্রকল্প। এমনিতে কয়েক বছর আগেও গঞ্জাম জেলায় বাল্যবিবাহের ঘটনা শোনা যেত প্রায়ই। ঠিক এই সময় সেখানে জেলাশাসক হিসাবে এলেন বিজয় অমৃত। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াইকেই তিনি সবচেয়ে জোর দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে বিশেষভাবে গঞ্জাম জেলার জন্যই তৈরি হয় ‘নির্ভয়া কড়ি’ প্রকল্প।
একেবারে স্কুল স্তর থেকে শুরু হয় বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার কর্মসূচি। অঙ্গনওয়াড়ি এবং আশা প্রকল্পের কর্মীরা প্রতি মাসে একবার করে এই নিয়ে আলোচনায় বসতেন স্কুলছাত্রীদের সঙ্গে। এছাড়া তাঁদের অভিভাবকদের মধ্যেও প্রচার চালাতেন তাঁরা। মেয়ের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার কথা ভেবে যে নির্দিষ্ট বয়সের আগে বিবাহ দেওয়া উচিৎ নয়, এটাই বোঝানোর চেষ্টা করতেন। এছাড়া প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে নির্দশ পাঠানো হয়, কোনো পড়ুয়া একটানা ৫ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলেই যেন অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করেন তাঁরা। আর অন্তিম পদক্ষেপ হিসাবে ঠিক করা হয়, জেলার সমস্ত বিবাহের ক্ষেত্রে আধার কার্ডের তথ্য জানাতে হবে। প্রয়োজনে সেই বিবাহ অনুষ্ঠানের ভিডিও রেকর্ডিং করতে পারে কর্তৃপক্ষ।
সমস্ত কর্মসূচি যথাযথভাবে মেনে চলার ফলেই শেষ পর্যন্ত বাল্যবিবাহকে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ২০২১ সালে গোটা জেলায় প্রায় ৫০ হাজার বিবাহ অনুষ্ঠানের ভিডিও রেকর্ডিং-ও করেছে প্রশাসন। ৪৫০ জন কিশোরীর বিবাহ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের চেষ্টায় তা আটকে দেওয়া গিয়েছে। আগামী বছরগুলিতেও যাতে বাল্যবিবাহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করাই এখন একমাত্র কর্তব্য।
আরও পড়ুন
কপালে বন্দুকের ঠেকিয়ে ‘পাকড়ুয়া বিবাহ’, শিকার বিহারের হাজার হাজার যুবক
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রেমিককে বিবাহের জন্য রাজপরিবার ছাড়লেন জাপানের রাজকন্যা