সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পটার কথা মনে আছে? প্রফেসর শঙ্কুর বানানো লিঙ্গুয়াগ্রাফ যন্ত্রটার কথা? সময় নিত মাত্র মিনিট তিনেক। আর তার মধ্যেই ঝকঝকে বাংলায় টাইপ হয়ে বেরিয়ে আসত যে কোনো ভাষার অনুবাদ। তা মানুষেরই হোক কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর। তবে কল্পবিজ্ঞানের সেই গল্পই এবার বাস্তবায়িত হল কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের দৌলতে। তৈরি হল পৃথিবীর প্রথম জীব-জন্তুর ভাষার ট্রান্সলেটর। তবে লিঙ্গুয়াগ্রাফের মতো আলাদা কোনো যন্ত্র নয়, মোবাইল অ্যাপই জানিয়ে দেবে পোষ্যের বলা কথা।
তবে যে-কোনো পোষ্য বললে ভুল হবে খানিকটা। শুধুমাত্র বিড়ালের কথা বুঝতেই বিশেষভাবে কোড করা হয়েছে এই অ্যাপের প্রোগ্রামিং। বেলভিউয়ের সংস্থা অ্যাকভেলনের প্রযুক্তি বিভাগের ম্যানেজার জেভিয়ার স্যাঞ্চেজে রয়েছেন এই অ্যাপ তৈরির নেপথ্যে। ইতিমধ্যেই অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএসের জন্য প্রকাশিত হয়েছে এই ‘মিয়াওটক’ অ্যাপ (MeowTalk)। বিনামূল্যেই যা ইনস্টল করা যাবে গুগল প্লে-স্টোর থেকে।
জেভিয়ার স্যাঞ্চেজ এই সংস্থার আগে প্রযুক্তি বিভাগে কাজ করেছেন অ্যামাজনে। ‘অ্যালেক্সা’-র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গঠনের দলে উপস্থিত ছিলেন তিনিও। তবে ‘অ্যালেক্সা’-য় কেবল মাত্র হিউম্যান ভয়েস রেকগনিশনের কাজ হয়। ফলে সেভাবে সু্যোগ মেলেনি তাঁর। দেড় বছরের মধ্যেই নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য তাই অ্যামাজন ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন অ্যাকভেলনে। তাঁর প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যায় সংস্থাটি।
লকডাউনে ডেটা সায়েন্সের মাধ্যমেই সংগ্রহ করেছেন বহু বিড়ালের শব্দের তথ্য। লকডাউনের কারণে বাড়িতে থাকা বিড়ালের মনিবদের থেকেও সংগ্রহ করেন নমুনা। বিড়ালের বিভিন্ন আচরণের সঙ্গে যে শব্দ জুড়ে রয়েছে, তাদের বিশ্লেষণই ছিল মূল লক্ষ্য। তারপর তার ভিত্তিতে বিড়ালের ১০টি পৃথক ভঙ্গিকে নথিবদ্ধ করেন স্যাঞ্চেজ। আর তার মাস চারেকের মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় এই অভিনব ট্রান্সলেটর। যে কোনো বিড়ালের করা শব্দের সময় এই অ্যাপ খুলে রাখলেই তৎক্ষণাৎ অনুবাদ হয়ে যাবে তার কথা। স্ক্রিনে ইংরাজি হরফেই ফুটে উঠবে তার ভাষ্য।
তবে মাত্র এই দশটা ভঙ্গিতেই শেষ নয়, রয়েছে আরও চমক। অ্যাপটির মধ্যে রয়েছে ভয়েস রেকগনিশনের ক্ষমতাও। কোনো শব্দ বিড়ালের নাকি তা মনুষ্যসৃষ্ট তাও আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারে এটি। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী যে কোনো ব্যবহারকারীর ব্যবহারের সময় অ্যাপটি তথ্য সংগ্রহ করবে বিড়ালের আওয়াজের। নতুন কোনো শব্দ পেলেই সংগ্রহ করবে তা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমেই হবে তার বিশ্লেষণ। সেক্ষেত্রে বিড়ালের শব্দকোষে নতুন শব্দও যোগ করতে থাকবে ‘মিয়াওটক’।
সিটেল এবং সিলিকন ভ্যালি মিলিয়ে ১৫০টি হাব রয়েছে সংস্থাটির। সব মিলিয়ে কর্মীসংখ্যাও মেরেকেটে ৮০০। কিন্তু তারপরেও বিশ্ববাজারে যথেষ্ট বড়ো ভূমিকা রাখে এই প্রযুক্তি সংস্থা। মাইক্রোসফট, রেডইট, ডোরড্যাশ প্রভৃতি প্রথমসারির সংস্থায় প্রযুক্তিগত সাহায্য পৌঁছে দেয় তাঁরাই। এবার এই চমকপ্রদ অ্যাপ্লিকেশন প্রকাশ করে আরও একবার সেই কথাই যেন মনে করিয়ে দিল অ্যাকভেলন।
আরও পড়ুন
নতুন রাস্তার জন্য অ্যাপ-নির্ভর সাইকেল নিউটাউনে
গুগল প্লে-স্টোরে এই অভিনব অ্যাপ আসার পরেই রীতিমতো সাড়া পড়ে গেছে। দু’দিনের মধ্যেই ডাউনলোড হয়েছে হাজারেরও বেশি ইউজারের ফোনে। তবে অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন অ্যাপের কার্যকারিতা নিয়ে। স্রষ্টা স্যাঞ্চেজ নিজেও জানিয়েছেন শুরুতে অনেক সময়ই প্রত্যাশিত ফলাফল নাও মিলতে পারে। তবে যতদিন যাবে নিজেই নিজেকে আরও উপযুক্ত, করে তুলবে ‘মিয়াওটক’। বিড়ালের কথার সম্পূর্ণ শব্দকোষ তৈরিতে সময় লাগবে তার। আর তারপরেই সেতু নির্মিত হবে পোষ্যের সঙ্গে মানুষের...
(এটি একটি আশ্চর্য প্রযুক্তির দাবির খবর মাত্র। এই অ্যাপের কার্যকারিতা কিংবা ফলাফলের জন্য কোনোভাবেই প্রহর দায়ী নয়।)
তথ্যসূত্র-
১. ‘MeowTalk,’ an app that translates cat sounds, is a pet project for this former Alexa engineer, Kurt Schlosser, Geekwire
আরও পড়ুন
তৈরি করলেন পাখা টানার মেশিন, সেটাই হয়ে গেল ভারতের প্রথম পেটেন্ট অ্যাপ্লিকেশন
Powered by Froala Editor