বাঙালির রক্তে হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে খানিকটা দুগ্গাপুজোও মিশে থাকে। পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল শারদ পত্রিকা। বাঙালির পুজো ঘিরে থাকে নানান পত্রিকার পুজোসংখ্যায়। পুজোসংখ্যাই হোক আর যে সংখ্যাই হোক, যে-কোনো পত্রিকায় মূলত তিনটি দফায় বিজ্ঞাপন হয়। প্রথমেই থাকে লেখা আহ্বান-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি। তারপরেই রাখা হয় পত্রিকার প্রচার— কী কী থাকছে, কে কে লিখছেন সব জানানো হয় এবং সবশেষে বিনিময় মূল্য ও সংগ্রহ করার পদ্ধতি দিয়ে শেষ দফার প্রচার করা হয়। তবে বিখ্যাত কিছু পত্রিকার ক্ষেত্রে প্রথমটি থাকে না, কারণ তারা আগেভাগেই ঠিক করে রাখেন কার কার লেখা নেবেন। যাক, সে অন্য কথা।
কেমন ছিল প্রথম পুজোসংখ্যার প্রচারের কথা?
পুজো উপলক্ষে প্রকাশিত প্রথম পত্রিকার নাম হল ‘ছুটির সুলভ’। তবে এটি কোনো স্বাধীন পত্রিকা নয়। কেশব সেনের ভারত সভার সপ্তাহিক পত্রিকা ছিল ‘সুলভ সমাচার’। বাংলা ১২৮০ সনের দুর্গাপুজোর সময় সুলভ সমাচারের একটি সংস্করণ ‘ছুটির সুলভ’ নামে প্রকাশ পেয়েছিল। পুজোর ছুটিতে পড়া হবে, তাই নাম ‘ছুটির সুলভ’।
বলাই বাহুল্য, ব্রাহ্মসমাজের পত্রিকা যেহেতু, তাই কোনোভাবেই একে চিরাচরিত শারদ সংখ্যা বলা যায় না। তবে, পুজোর ছুটিতে পড়ার জন্যই এই পত্রিকার জন্ম। তাই পুজোসংখ্যা বললেও খুব ভুল কিছু বলা হয় না। ১২৮০ সনের ১০ই আশ্বিন বৃহস্পতিবার ‘ছুটির সুলভ’ প্রকাশিত হয়েছিল। দাম রাখা হয়েছিল এক পয়সা। তার আগে দুই সপ্তাহে ছুটির সুলভের বিজ্ঞাপন করা হত।
১২৮০ বঙ্গাব্দের ১লা আশ্বিন মঙ্গলবার সুলভ সামাচার পত্রিকায় ছুটির সুলভের বিজ্ঞাপনে লেখা হল, "ছুটির সুলভ! আগামী ছুটি উপলক্ষ্যে সুলভের একটি বিশেষ খন্ড বাহির হইবে। উত্তম কাগজ, উত্তম ছাপা। দাম কিন্তু এক পয়সা। মজা করে পড়িতে পড়িতে ঘরে যাও। একটা পয়সা দিয়ে সকলের কিনিতেই হইবে। দেখ যেন কেউ ফাঁকি পোড়ো না।"
এটিই হল বাংলার তথাকথিত পুজো সংখ্যার প্রথম বিজ্ঞাপন। এক সপ্তাহ পরে ৮ই আশ্বিন দ্বিতীয় বিজ্ঞাপন বের হল। তাতে লেখা হল, "আগামী বৃহস্পতিবার ছুটির সুলভ বাহির হইবে। কেমন সুন্দর কাগজ, কেমন পরিষ্কার ছাপা, কেমন মজার ছবি, অথচ সস্তা দাম। ছেলে, বুড়ো, যুবা সকলেই মজা করিয়া ছুটির সুলভ পড়ো। দেখ যেন কেউ ফাঁকি পড়ো না। ...কত মজার মজার কথা।"
পত্রিকায় ছিল গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা। এইভাবেই পথচলা শুরু শারদ সংখ্যার।
Powered by Froala Editor