এখনও আগুন জ্বলছে অসমের বাঘজানে, বহু বন্যপ্রাণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জ্বলছে আগুন। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, এমনকি নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো সম্ভবনাও দেখা যাচ্ছে না। আসামের তিনশুকিয়া জেলার বাঘজান তৈলখনি অঞ্চলের আগুন এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে ১০ কিলোমিটার দূর থেকেও তার অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে আশেপাশের এলাকায়। ইতিমধ্যে অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের দুজন কর্মচারী দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। মানুষ তো বটেই, অসংখ্য বন্য ও জলজ প্রাণীর প্রাণ সংশয় দেখা দিয়েছে এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে।

গত ২৭ মে বাঘজান কূপের একটি তেলের পাইপলাইনে ফাটল দেখা দেয়। সেখান থেকেই তেল ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী জলাভূমি অঞ্চলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পাইপলাইনে ক্যাপ পরানোর চেষ্টা করা হলে ঘটে যায় বিস্ফোরণ। এই দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়িত্বে থাকা গুজরাটের কোম্পানির উপর দোষ দেওয়া হলেও, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং আসাম রাজ্য সরকার। প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে তেল ছড়িয়ে পড়তে থাকার পর অবশেষে সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞ দল এসে উপস্থিত হয় গত সোমবার। আর তাঁরা কাজ শুরু করতেই আবার ঘটল বিপত্তি। মঙ্গলবার বিশেষজ্ঞ দলটি কাজে হাত দেওয়া মাত্র আগুন লাগলো তেলের কূপে। সেই আগুন এখনও জ্বলছে।

পার্শ্ববর্তী জলাভূমি অঞ্চলে তেল ছড়িয়ে পড়তেই বেশ কিছু গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যুর খবর আসে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরেই ডিব্রু নদী। সেখানেও খনিজ তেল মিশে নদীর রং বদলে গিয়েছিল। এমনকি জঙ্গলের মধ্যে উড়ুক্কু কাঠবেড়ালি, ধনেশ, কিং কোয়েলের মত পশুপাখির মৃতদেহ খুঁজে পান স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা। এর মধ্যে আগুন লাগার ঘটনায় যে পশুপাখির জীবন আরও অনেকটাই বিপন্ন হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই। স্থানীয় প্রশাসনের সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে মানুষ সহ সমস্ত জীবজন্তুর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কিন্তু এই আশ্বাসেও আতঙ্ক দূর হচ্ছে না। মাগুরি বিল ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার ৩০০ প্রজাতির পাখির অনেকগুলি রীতিমতো বিপন্ন। ব্ল্যাক ব্রেস্টেড প্যারটবিল, সোয়াম্প প্রিনিয়া, জার্ডনস ব্যাবলার প্রভৃতি পাখি আগুনের কবলে পড়লে বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত, বাঘজান কূপের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে মোতায়েন করা হয়েছে বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার। স্থানীয় সেনাবাহিনী এবং ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স আশেপাশের এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির কোনো সম্ভবনা এখনও দেখা যায়নি। যদিও ৫০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এখনও ২৫ দিনের বেশি সময় লাগবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।

আরও পড়ুন
দু’সপ্তাহ ধরেই ছড়াচ্ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস, এবার বিধ্বংসী আগুন অসমের বাঘজানে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
একের পর এক দুর্যোগ, এবার ভয়ঙ্কর বন্যার কবলে অসম

More From Author See More