বাড়ির ফার্নিচার হোক বা আস্ত একটা ঘর, প্লাইউড দিয়ে কতকিছুই তৈরি করা যায়। কিন্তু তাই বলে মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো স্যাটেলাইটও তৈরি হবে প্লাইউড দিয়েই? সম্প্রতি এমনই উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। মহাকাশের আবর্জনা বা স্পেস গার্বেজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তিত ছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার হয়তো সেই সমস্যার সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষেই মহাকাশে পাড়ি দিতে চলেছে ওয়াইসা উডস্যাট। আর পৃথিবীর প্রথম কাঠ বা প্লাইউডের তৈরি স্যাটেলাইট প্রেরণের ইতিহাস তৈরি করবে ফিনল্যান্ড।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি সূত্রে জানানো হয়েছে, আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে মহাকাশে পাঠানো হবে এই স্যাটেলাইট। এই অভিযানের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। তাই স্যাটেলাইটের আকার ও গঠন হবে অত্যন্ত সাধারণ। মাত্র ১০ সেন্টিমিটার বাহুবিশিষ্ট বর্গাকার এই স্যাটেলাইটের প্রস্তাবিত কক্ষপথ পৃথিবী থেকে ৫০০-৬০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। তাছাড়া, এই স্যাটেলাইট স্থাপন করা হবে পোলার সান-সিংক্রোনাস অঞ্চলে। তার কারণ আর কিছুই না, সূর্যের অশোধিত রশ্মি এবং অন্যান্য মহাজাগতিক রশ্মির প্রভাবে প্লাইউডের কোনোরকম ক্ষতি হয় কিনা, সেটাই দেখতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা।
ইতিমধ্যে প্লাইউডের তৈরি স্যাটেলাইটটি যাতে মহাকাশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, তার জন্য নানা ধরণের পরীক্ষামূলক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বায়ুশূন্য অঞ্চলে প্লাইউড যাতে ফুলে না ওঠে, তাই দীর্ঘদিন তাকে ভ্যাকুয়ামের মধ্যে রেখে অক্সিজেনশূন্য করে তোলা হয়েছে। তার উপরে দেওয়া হয়েছে খুবই পাতলা অ্যালুমিনিয়ামের আস্তরণ। এছাড়াও এই উপগ্রহের দুটি অংশ ধাতুর তৈরি। প্লাইউডের দেয়ালগুলি ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের রেল। তার সঙ্গে আছে একটি ধাতুর তৈরি সেলফি স্টিক। উপগ্রহর আবার সেলফি স্টিক? হ্যাঁ, এই সেলফি স্টিকের সঙ্গে থাকা ক্যামেরাতে নিজেরই ছবি তুলতে থাকবে ওয়াইসা উডস্যাট। আর সেইসমস্ত ছবি দেখে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করবেন, প্লাইউডের তৈরি কোনো স্যাটেলাইট মহাকাশে কতদিন টিকে থাকতে পারে। সব মিলিয়ে যদি এই পরীক্ষা সফল হয়, তাহলে আগামীদিনে মহাজাগতিক আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় রীতিমতো মাইলস্টোন তৈরি করবেন বিজ্ঞানীরা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ভেঙে পড়ল বিশ্বের বৃহত্তম হিমশৈল, স্যাটেলাইটে বন্দি দৃশ্য