এ যেন প্রফেসর শঙ্কুর বিধুশেখর। এখনও ঠিকঠাক কথা বলতে শেখেনি, কিন্তু টিকটিক করে নিজের মত তাকে জাহির করতে হবে। অবশ্য সেসব কথার মানে বোঝেন না কেউই। ফিনল্যান্ডের আল্টো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপিকা তথা চিত্রশিল্পী লরা বেলোফের ঘরের ছোট্ট গাছটা এমনই। অবশ্য এটা কোনো বিশেষ গাছ নয়। সমস্ত গাছই এমন শব্দ করে বলে বিশ্বাস বেলোফের। শুধু সেই শব্দ শোনার উপযুক্ত নয় মানুষের কান। তিনি তাই নিজের ঘরেই তৈরি করে ফেলেছেন একটা বিশেষ যন্ত্র। যাতে গাছের শিকড়ের শব্দ মাইক্রোফোনে ধরা পড়ে, এবং সেই শব্দ তারপর মানুষের শ্রুতিগ্রাহ্য করে তোলা হয়। ফ্রিকোয়েন্সির সামান্য রদবদল করেই এটুকু করা সম্ভব।
বিগত ২ বছর ধরে নিজের ঘরেই এই পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন বেলোফ। প্রথমে শব্দের হদিশ পেয়েই আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর ঘরে এক বন্ধু আসে। তখন হঠাৎই শব্দ থেমে যায়। একটু অবাক হলেও বিষয়টিকে পাত্তা দেননি বেলোফ। কিন্তু বন্ধুটি বেরিয়ে যেতেই আবার শুরু হয় টিকটিক আওয়াজ। এবার খটকা লাগে তাঁর। আর এই একবার নয়। ২ বছর ধরে তিনি একটানা এমনটাই শুনে আসছেন। ঘরে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি এলেই গাছ নিশ্চুপ হয়ে যায়। কিন্তু যখনই বেলোফ একা থাকেন, তখনই গাছ শব্দ করে। যেন কিছু একটা বলতে চাইছে। অথবা শোনাচ্ছে তার নিজের জীবনের গল্প।
গাছেদের শরীর সম্পর্কে এখনও বিজ্ঞানীদের ধারণা খুবই সীমিত। জগদীশচন্দ্রের আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত তো তাদের যন্ত্রণাবোধ সম্পর্কেই কোনো ধারণা ছিল না। এমনকি কয়েক দশক আগে পর্যন্তও এই বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকে। যন্ত্রণাবোধ থাকার জন্য স্নায়ুতন্ত্র থাকা প্রয়োজন। গাছের মস্তিষ্কই নেই। তাহলে কীভাবে সম্ভব? আর এখন শুধু যন্ত্রণাবোধ নয়, গাছেদের স্মৃতিশক্তি এবং তাদের কথোপকথনের বিষয়টি নিয়েও গবেষণা চলছে। ২০১২ সালের পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া ইউনিভার্সিটিতে এই নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন মনিকা গ্যাগলিয়ানো এবং আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী। গ্যাগলিয়ানো নিজেও গাছের শিকড়ে এমন শব্দ শুনেছিলেন। এই গবেষণার সূত্র ধরেই ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁদের গবেষণাপত্র। আর ২০১৯ সালে ইজরায়েলের বিজ্ঞানীরা আরও এক চমকপ্রদ তথ্য হাজির করলেন। তাঁরা দেখালেন, মৌমাছির ডানার শব্দ শুনলে ফুলের পাপড়ির কাছে বেশি পরিমাণে মধু জমা হয়। অর্থাৎ শুধু শব্দ তৈরিই নয়, শব্দ চিনতেও পারে গাছ।
অবশ্য গাছেদের কথা বলার বিষয়টি নিয়ে হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটির গবেষক ডেভিড রবিনসনের বক্তব্য, গাছেদের শব্দ চেনার বা তৈরি করার ক্ষমতা থাকতেই পারে। অন্তত থাকাটা অসম্ভব নয়। কিন্তু মানুষ বা অন্য প্রাণীদের মতোই যে তারা নিজেদের মনের ভাব প্রকাশের জন্য কথা বলে, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বস্তুত গাছেদের মন নামক জটিল বিষয়টি থাকা একরকম অসম্ভব বলেই মনে করছেন তিনি। তবে এখনও পর্যন্ত সবটাই রয়েছে অনুমানের স্তরে। নিশ্চিতভাবে কোনোকিছুই বলতে প্রস্তুত নন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন
ফেলে দেওয়া মাস্ক থেকেই জন্মাবে গাছ, আবিষ্কার ভারতীয় পরিবেশকর্মীর
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বৃক্ষচ্ছেদন রুখতে গাছের গায়ে ভগবানের ছবি সাঁটা ছত্তিশগড়ে