এক দশকেরও বেশি সময় আগে একজন নায়কের চরিত্রে অভিনয় করা একটি ডকুমেন্টারিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। অবাক লাগলেও, সেই সিনেমার পরিচালক ছিলেন একজন আমেরিকান। টিম স্টার্নবার্গের এই সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন কোলকাতার বায়োস্কোপওয়ালা মহম্মদ সেলিম। সে সময় বিবিসি কিংবা ইন্টারন্যাশানাল ম্যাগাজিনেও তাকে নিয়ে লেখালিখি করা হয়েছিল।
কিন্তু সময় পাল্টেছে। ডিজিটাল মাধ্যমে সিনেমা দেখতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন এখনকার মানুষ। এক টাকার বিনিময়ে প্রোজেক্টরে সিনেমা দেখার সঙ্গে পরিচিত নয় আজকালকার ছেলেমেয়েরা। কয়েক শতক আগেও সেলুলয়েডে সিনেমা দেখেই মজা পেতেন ছোটরা। কিন্তু ৪৫ বছর ধরে প্রোজেক্টরে সিনেমা দেখিয়ে চলা এই মানুষটির সংসার চালানোই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
একসময়ে তাঁর এই ফিল্ম প্রোজেক্টরটিতে ঘুরেছে অনেক সিনেমার গল্প। কিন্তু সেকাল আর একালের মধ্যে তফাত অনেকখানি। মোবাইল আসার পর থেকে মানুষের কাছে সিনেমা পৌঁছে যাওয়ার সহজ মাধ্যম আবিষ্কৃত হয়েছে। হারিয়েছে বায়োস্কোপওয়ালাদের যুগ। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে তাই ৬৭ বছরের এই ভদ্রলোকের সিনেমা দেখানোর সুযোগ কমে এসেছে।
প্রোজেক্টরটিকে এতটাই ভালোবাসেন তিনি যে, পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়েও সেটি বিক্রি করেননি। তাঁর কাছে এই প্রোজেক্টরটি অমূল্য। নিখাদ ভালোবাসা থেকেই তিনি এই পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন। স্ট্রিট সিনেমার আর্টকে তিনি সংরক্ষিত করে যেতে চান তাঁর এই যন্ত্রটিতে।
কোনো ছেলে বা মেয়ে আজও যখন তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়, আশায় ভরে ওঠে তাঁর বুক। এই বুঝি কেউ ফিরে যেতে চায় পুরনো দিনে। কিন্তু সে স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। পাড়ার মধ্যে দিয়ে একজন বায়োস্কোপওয়ালা হেঁটে যাবে সিনেমা দেখানোর জন্যে, এমন দৃশ্য আজকালকার বাচ্চারা কল্পনাতেও আনতে পারে না।
চার ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী’র সংসার। আজকাল বায়োস্কোপ দেখিয়ে উপার্জন করা কঠিন হয়ে পড়েছে একসময়ের এই নায়কের। সেলিমবাবু কলকাতার বায়োস্কোপওয়ালাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু দুর্গাপুজো, রথযাত্রা, ঈদ বা কালীপুজো ছাড়া সারাবছর তাঁর ব্যবসায় বিশেষ কোনো আয় হয়না। এমনকি, তাঁর নিজের সন্তান ও নাতিরাও স্মার্টফোনে সিনেমা দেখায় ব্যস্ত থাকে।
জীবনসায়াহ্নে এসে এমন দিন দেখতে হবে, বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেননি এই মানুষটি। সিনেমা দেখিয়ে, সিনেমাকে সংগ্রহে রেখে যে মানুষটির জীবন চলত এককালে, আজকের দিনে তাঁকে ভালো রাখতে এতটুকুও চেষ্টা করবে না কেউ?
ঋণ – টাইমস অব ইন্ডিয়া