পরিবেশকর্মীদের বরাবরের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রথম বিশ্বের দেশগুলি পারমাণবিক বিদ্যুতের সঙ্গে ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। আর এই তালিকায় আমেরিকার পরেই এসে যায় ফ্রান্সের নাম। যদিও পারমাণবিক বিদ্যুতের গ্রাহক হিসাবে আমেরিকাকেও টেক্কা দিয়ে যায় ফ্রান্স। কিন্তু এবার হয়তো পরিস্থিতির বদল ঘটতে চলেছে। আর তার সূত্রপাত ঘটতে চলেছে ফ্রান্সের প্রাচীনতম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ফেসেনহেইম বন্ধ করে দেওয়ার মধ্যে দিয়েই।
২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু চুল্লিতে দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই সারা পৃথিবীজুড়ে পরমাণু বিদ্যুতের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছিল। আর সেই সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হল্যান্ডের গলাতেও সুর ছিল পরমাণু বিদ্যুতের বিপক্ষেই। যদিও ১৯৭৭ সাল থেকে কাজ করে আসা ফেসেনহেইম কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া যায়নি তখনই। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০১৮ সাল থেকে। অর্থাৎ প্রস্তাবিত ৪০ বছরের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই বিদায়ের ঘণ্টা বেজে উঠেছিল। চলতি বছরের সেই কাজ এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। দুটি চুল্লির একটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। আর অন্যটি আগামী মঙ্গলবারেই বন্ধ হতে চলেছে। যদিও পারমানবিক বিস্ফোরণের সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এমনকি ২০৪০ সাল পর্যন্ত আশেপাশের অঞ্চল স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফ্রান্সের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭০ শতাংশই আসে পারমাণবিক চুল্লি থেকে। আর এই প্রকল্পকে ঘিরে কাজ করেন অসংখ্য শ্রমিক। ফলে পারমাণবিক বিদ্যুতের বিরুদ্ধে রায় দিয়েও ফ্রান্স যে আসলে নিজের অর্থনীতিকেই দুর্বল করে তুলছে, সেকথাও মনে করছেন অনেকে। এমনকি কর্মহীন শ্রমিকদের সংস্থান নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। যদিও এই সবই কিছু সময়ের জটিলতা। কিন্তু ফুকুশিমার মতো দুর্ঘটনা যেন আগামী দিনে আর না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে ফ্রান্স। হয়তো খুব শিগগিরই পাওয়া যাবে বিকল্প কোনো বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রযুক্তির সন্ধান। অথবা ছোটো ছোটো প্রযুক্তিকেই একসঙ্গে কাজ লাগিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে। আপাতত সেই দিকেই পা বাড়িয়েছে ফ্রান্স। আর এই উদ্যোগকে স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসা জানিয়েছেন সারা পৃথিবীর পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
১৮৯৭ সালে যাত্রা শুরু সিইএসসি-র, জনপ্রিয়তায় গ্যাসবাতির কাছে হেরে গিয়েছিল বিদ্যুৎ