কয়েক বছর আগে এক তালিবান নেতার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন আনীশা শাহিদ। সেই নেতা রাজি হননি। কোনো মহিলার সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন তিনি। বরং প্রস্তাব রেখেছিলেন, আনীশা যদি ক্যামেরা ধরেন তাহলে ক্যামেরাম্যানের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন তিনি। সাংবাদিক নয়, মহিলা হওয়ার জন্যই এই অপমান। শুধুই অপমান নয়, প্রতি মুহূর্তে রয়েছে প্রাণের আশঙ্কাও। আজকের আফগানিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যেন নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে আনীশা শাহিদের এই লড়াই। অথবা তাঁর মতো আরও যে সমস্ত মহিলা সাংবাদিকরা সমস্ত বিপদ তুচ্ছ করে দেশের প্রকৃত বাস্তবতার ছবি তুলে আনছেন রোজ।
তালিবানদের এই ক্ষমতাবিস্তার দেশের প্রতিটা মহিলার জন্যই আশঙ্কাজনক, মনে করেন আনীশা। তাঁর বেড়ে ওঠাও যে তালিবান শাসনের সময়েই। সেই সময়েই মেয়েদের পড়াশোনার সব সুযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অধীর আগ্রহে আনীশা বারবার বাবাকে জিজ্ঞেস করতেন, স্কুল কবে খুলবে? অবশেষে ২০০১ সালে আমেরিকার সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের দখল নিলে তালিবানদের ক্ষমতার ইতি ঘটল। কাবুল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেন আনীশা। কিন্তু ঠিক তখনই শুরু হয়ে গিয়েছে আফগান যুদ্ধ। তালিবান এবং মার্কিন বাহিনীর যুদ্ধে সাধারণ মানুষের অবস্থা শোচনীয়। আর আমেরিকার সেনাবাহিনীও তো মানুষকে সাহায্য করতে আসেনি। এসেছিল মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ক্ষমতা বিস্তার করতে। সেই মুহূর্তেই আনীশা ঠিক করে ফেলেছিলেন তাঁর ভবিষ্যৎ। বাবা-মা অবশ্য একটু আপত্তি জানিয়েছিলেন। বিশেষ করে, তাঁর বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে একজন শিক্ষিকা হবে। কিন্তু আনীশা বলেছিলেন, সাংবাদিক না হলে তিনি কিছুই করবেন না।
২০০১ সাল থেকে প্রায় ২০ বছরের যুদ্ধে ১ হাজারেরও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন গোটা আফগানিস্তানজুড়ে। আর তাঁদের মধ্যে মহিলা সাংবাদিকের সংখ্যাই বেশি। আনীশাকেও তাই সবসময় প্রাণ হারানোর ঝুঁকি নিয়ে ঘুরতে হয়। এখন অবশ্য মেয়ের পেশা নিয়ে আর আপত্তি নেই তাঁর বাবা-মার। কিন্তু তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবে সবসময় উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন তাঁরা। আনীশাও প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা দিয়ে অফিসে যান। তবু টের পান, সবসময়ই কেউ না কেউ নজর রাখছে তাঁর উপর। এর মধ্যে আফগানিস্তানের ‘ফ্রি স্পিচ হাব’ থেকে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন আনীশা। স্বীকৃতি পেয়েছেন সারা পৃথিবীর সাংবাদিকদের সংগঠন ‘রিপোর্টারস উইদ-আউট বর্ডারস’ থেকেও। তবে আনীশা মনে করেন, তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কারটা পাবেন সেদিন, যেদিন আফগানিস্তানের সমস্ত যুদ্ধ থেমে যাবে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে তা এক দূরগত কল্পনা মনে হলেও আনীশার মতো অনেকেই বিশ্বাস করেন, একদিন সত্যিই ঝড় থেমে যাবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস— যে তালিবানি কীর্তির নিন্দায় আজও সরব বিশ্ব