মানুষের সম্পূর্ণ শরীরের তুলনায় মস্তিষ্ক আর সুষুম্নাকাণ্ডের আয়তন আর কতটুকু? আর এই ছোট্ট অংশ থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় সমস্ত দেহের কর্মকাণ্ড। ফলে খুব ছোট কোনো দুর্ঘটনাতে এই অংশে আঘাত লাগলে বড়ো ক্ষতি হয়ে যায়। পক্ষাঘাতে অঙ্গহানি হয় বহু মানুষের। আজকাল অবশ্য কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সেরে উঠছেন অনেকেই। তবে এই কৃত্রিম অঙ্গ কেবল যন্ত্রের মতো কাজ করে যেতে পারে। তাতে জীবিত অঙ্গের সমস্ত অনুভূতি কি থাকা সম্ভব? গবেষকরা উত্তর দিচ্ছেন, হ্যাঁ সম্ভব। হাতেকলমে এমন ঘটনা ঘটিয়ে দেখলেন আমেরিকার চিকিৎসকরা।
অলাভজনক সংস্থা ব্যাটল এবং ওহিও মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকরা একটি কম্পিউটার ইন্টারফেসের মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অঙ্গে অনুভূতির সঞ্চার করে দেখালেন। আর এই আবিষ্কারে তাজ্জব বনে গেছেন বিশ্বের বহু বিজ্ঞানী। স্নায়ুতন্তুর বদলে এখানে ইঞ্জিনিয়াররা ব্যবহার করেছেন বিদ্যুৎ পরিবাহী তার। আর মস্তিষ্কের পাশে একটি ছোট্ট মাইক্রোচিপের মাধ্যমে এই কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও করেছেন। এই প্রযুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস বা বিসিআই। এই প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগ পৃথিবীতে এই প্রথম।
বছর দশেক আগে একটি পথদুর্ঘটনায় প্রায় মৃত্যুমুখে পড়েছিলেন আইয়ান বুরখার্ট। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। চিকিৎসকদের চেষ্টায় প্রাণ ফিরে পেলেও তাঁর ডান হাত সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যায়। ২০১৪ সালে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে আবার ফিরে পেলেন তাঁর হাত। কিন্তু এর মধ্যে জীবিত অঙ্গের কোনো অনুভূতির সঞ্চার ছিল না। অবশেষে আরও ৬ বছর পর গবেষকদের চেষ্টায় সেই কৃত্রিম অঙ্গেই অনুভূতির সঞ্চার হয়েছে। এমনকি প্রোগ্রামিং-এর মাধ্যমে বিভিন্ন সরল প্রতিবর্ত ক্রিয়ার ব্যবস্থাও আছে এই প্রযুক্তিতে। বুরখার্টের হাত এখন আগুনের উত্তাপ বুঝতে পারে, কঠিন ধাতুর আঁচড় বুঝতে পারে। আবার ফুলের কোমল স্পর্শও টের পায় তাঁর হাত। তাঁর নিজের হাতের সঙ্গে এই কৃত্রিম হাতের আর তেমন কোনো পার্থক্য নেই বলেই মনে করছে বুরখার্ট। আর প্রথম প্রচেষ্টাতেই সাফল্য পেয়ে খুশি গবেষকরাও।