সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমছে সার্কাসের চাহিদা। কিন্তু সার্কাসের ক্লাউনদের জনপ্রিয়তায় টান পড়েনি এখনও। ক্লাউন বা জোকার, মুখে-চোখে রং মেখে মানুষকে হাসানোই যাঁদের কাজ। কিন্তু যদি আনন্দ দেওয়ার পরিবর্তে তাঁরাই হয়ে ওঠেন ভয়ের কারণ? ক্লাউনের অঙ্গভঙ্গি দেখে যখন অনেক মানুষ হাসছেন, তখনই সেই ভিড়ের মধ্যে হয়তো কারোর শরীর খারাপ হতে শুরু করল। বুকে অসহ্য যন্ত্রণা। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না সেখানে। শুনতে আশ্চর্য মনে হলেও এমন ঘটনা এখন আর নতুন নয়। বেশ কিছু বছর ধরেই সারা পৃথিবীতেই এমন ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে। লোকমুখে এই রোগের একটি নামও ছড়িয়ে পড়েছে। কলরোফোবিয়া, অর্থাৎ ক্লাউন (Clowns) থেকে ভয়।
কলরোফোবিয়া নামটি ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও ডায়াগনোস্টিক্যাল অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিস-অর্ডারে এই সংক্রান্ত কোনো উল্লেখ নেই। সাধারণত অন্য কোনো ধরণের ফোবিয়া বা উদ্বেগ থেকে একে আলাদা করে চেনার উপায় থাকে না। তবে অনেকেই বলেন, অন্য কোনো কিছুতে তাঁদের উদ্বেগ নেই। শুধু মুখোশ ঢাকা বা রং মাখা কোনো ক্লাউনের মুখ দেখলেই শুরু হয় অস্বস্তি। ক্রমশ তা শারীরিক সমস্যায় পরিণত হয়। বুকে ব্যথা, দ্রুত রক্তসঞ্চালন শুরু হয়। এমনকি কারোর কারোর হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত ঘটে যায় এই কারণে।
পরিসংখ্যান বলছে, সারা পৃথিবীতে প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ১ জন কলরোফোবিয়ায় আক্রান্ত। তবে বাস্তব সংখ্যাটা তার অন্তত ১০ গুণ হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। শুধু শিশুরাই নয়, যে কোনো বয়সের মানুষই এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। আর পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের মধ্যে কলরোফোবিয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। কিন্তু ঠিক কী কারণে এমন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়? এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর অবশ্য কারোরই জানা নেই। তবে অনেকের মতে এই রোগের অত্যন্ত সাধারণ একটি কারণ থাকতে পারে। ক্লাউনদের সারা মুখ, এমনকি শরীরের কিছু অংশও ঢাকা থাকে রং এবং পোশাকের আড়ালে। এর নিচে ঠিক কী আছে, তা জানা হয়ে ওঠে না। আর সেই কারণেই নানা রকম উদ্বেগ গড়ে উঠতে পারে।
অবশ্য অনেক মনোবিদ এই ব্যাখ্যা মানতে চান না। তাঁদের মতে, মানুষ যতক্ষণ না জানছে যে সেই বিষয়টি থেকে ভয়ের কোনো কারণ থাকতে পারে, ততক্ষণ তা নিয়ে ভয় তৈরিও হয় না। আর ক্লাউন নিয়ে এই ভয় আসলে আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে বেশ কিছু সিনেমা এবং গল্পের বই। ডিসি কমিক্সের ব্যাটম্যান সিরিজের কথাই ধরা যেতে পারে। সেখানে জোকার চরিত্রটি অনেককেই ভয় পাইয়ে দিতে পারে। আর হলিউডের আরেক জনপ্রিয় সিনেমা ‘আইটি’-র কথাই বা বাদ দেওয়া যায় কী করে? শুধু সিনেমাটিই নয়, স্টিফেন কিং-এর উপন্যাসটিও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। আবার আমেরিকার সিরিয়াল কিলার জন গেসি খুন করতেন ক্লাউন সেজে। তাঁর জীবন নিয়েও তৈরি হয়েছে একাধিক সিনেমা। এই সবই একভাবে কলরোফোবিয়ার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন
কক্সবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ভস্মীভূত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দশ হাজার ঘর
শৈশবের নির্মল আনন্দের অংশ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন ক্লাউনরা। কিন্তু ক্রমশ তাঁরাই হয়ে উঠছেন এক অন্ধকার জগতের প্রতিনিধি। বাস্তবে নয়, রূপকে। আর সেই রূপককে বাস্তব করে তুলেই মানুষের মন জন্ম দিচ্ছে এই অদ্ভুত রোগের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রকোপ কতটা বাড়ে, আপাতত সেটা দেখে যাওয়া ছাড়া কোনো রাস্তা নেই।
আরও পড়ুন
বাকিংহ্যাম প্যালেসে নাৎসি-আক্রমণের ভয়, বন্দুক চালানো শিখলেন রাজকুমারী এলিজাবেথ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গাছে-গাছে ঝুলছে ভয়ঙ্কর সব পুতুল, স্ট্যাফোর্ডশায়ারের অরণ্যের রহস্য আজও অমীমাংসিত