অসুখ সারানোর দাওয়াই ভিডিও গেম! ছাড়পত্র মার্কিন সংস্থার

ভিডিও গেমের প্রতি শিশু, কিশোরদের আসক্তি কঠিন মানসিক সমস্যার দিকে ঠেকে দিতে পারে, তা উঠে এসেছে একাধিক সমীক্ষায়। বিশেষত মহামারী চলাকালীন সময়ে, পড়াশোনা অনলাইন মাধ্যম নির্ভর হয়ে ওঠায়, গেমের প্রতি ক্রমশ আসক্তি বাড়ছে শিশুদের। বদল আসছে আচার-আচরণেও। কিন্তু ভিডিও গেমই যদি মনযোগ গড়ে তোলার হাতিয়ার হয়? শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। ভিডিও গেমকে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার বা এডিএইচডি’র (ADHD) ‘ওষুধ’ হিসাবে ছাড়পত্র দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও (FDA)।

এনডেভর-আরএক্স (EndeavourRX)। ‘অ্যাকিলি কেয়ার’ নির্মিত ভিডিও গেম-ভিত্তিক এই যন্ত্রই এবার চিকিৎসকদের হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে এডিএইচডির বিরুদ্ধে। এতদিন পর্যন্ত এডিএইচডি চিকিৎসায় থেরাপি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ ব্যবহৃত হত। তবে বিকল্পের অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল বহু আগে থেকেই। ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে এডিএইচডি’র সমাধান খুঁজতে মাঠে নেমেছিল বেশ কিছু বহুজাতিক সংস্থা। দীর্ঘ সাত বছরের ট্রায়াল চলার পর এবার মিলল সাফল্য। 

কম্পিউটার-ভিত্তিক পরীক্ষায় এই যন্ত্র ‘পাশ’ করার পর শুরু হয়েছিল শিশুদের ওপর ক্লিনিকাল ট্রায়াল। প্রায় ছ’শোরও বেশি শিশুর ওপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল এই যন্ত্র। সেই সমীক্ষার ফলাফল অধ্যায়নের পরই এই যন্ত্রকে থেরাপিউটিক ডিভাইস হিসাবে ছাড়পত্র দেয় এফডিএ এবং টিওভিএ। মূলত ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পেডিয়াট্রিক রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে এনডেভর-আরএক্স। তবে রেজিস্ট্রেশন-লব্ধ কোনো ক্লিনিকের প্রেসক্রিপশন কিংবা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই ব্যবহার করতে হবে যন্ত্রটি। যন্ত্রটি উপলব্ধ নয় খোলা বাজারেও।


আরও পড়ুন
থেরাপিউটিক চিকিৎসায় দিশা দেখিয়ে সেরা বিজ্ঞানী-তালিকায় বঙ্গসন্তান

মূলত, ৬-১১ বছর বয়সী শিশুদের একটা বড়ো অংশ আক্রান্ত হয় এডিএইচডিতে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ লক্ষ শিশু প্রভাবিত এই রোগে। দেখা যায় চাঞ্চল্য, অমনোযোগিতা, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ, হতাশা, মাথা ব্যথা, আগ্রাসনের মতো উপসর্গ। এর মধ্যে বেশ কিছু উপসর্গের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রটি দারুণভাবে সফল বলেই অভিমত চিকিৎসকদের। তবে যন্ত্র ব্যবহারের আগে রোগের মাত্রার যথাযথ মূল্যায়ন করা অতিআবশ্যক বলেই সতর্ক করছেন গবেষকরা। 

আরও পড়ুন
মোৎজার্টের সুরেই এপিলেপ্সির চিকিৎসা, অবাক করা আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের

উল্লেখ্য, এটিই বিশ্বের প্রথম কোনো ভিডিও গেম যা থেরাপিউটিক ডিভাইস হিসাবে সবুজ সংকেত পেল। বদলে গেল ওষুধের সংজ্ঞাও। আগামীদিনে অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও ডিজিটাল থেরাপিকে হাতিয়ার করার কথা ভাবছেন চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যে ভিস্যুয়াল ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল রিয়ালিটির-ভিত্তিক একটি যন্ত্রকে অনুমোদন করেছে এফডিএ। যার ব্যবহার শুরু হবে ২০২২ সাল থেকেই। সবমিলিয়ে চিকিৎসা জগতের এই বিপ্লবে কেমিক্যাল ফর্মুলার পরিবর্তে প্রযুক্তিই যেন হয়ে উঠছে তুরুপের তাস…

আরও পড়ুন
সর্পদংশনের চিকিৎসায় ট্যাবলেটের ট্রায়াল কলকাতায়, দেশে প্রথম

Powered by Froala Editor

Latest News See More