১৮৪২ সাল। স্কটিশ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার বেইন আবিষ্কার করেছিলেন এক অদ্ভুত যন্ত্র। ফ্যাকসিমিলি (Facsimile) নামেই এই যন্ত্র অনায়াসেই যে-কোনো নথির ছবি তুলে টেলিগ্রাফের মাধ্যমে পাঠাতে পারত কয়েকশো মাইল দূরে। পরবর্তীতে এই যন্ত্রকে আরও উন্নত করে তোলেন ব্রিটিশ গবেষক ফেডরিক ব্ল্যাকওয়েল এবং জার্মান গবেষক আর্থার কর্ন। দুই বিশ্বযুদ্ধ তো বটেই, তার পরবর্তী সময়েও যা প্রশাসনিক যোগাযোগ এবং নথিপ্রেরণের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে গোটা বিশ্বে।
আরেকটু সহজ করে বলা যাক। আদতে ‘ফ্যাক্স’ (Fax) বলে আমরা যাকে চিনি, সেটি ফ্যাকসিমিলির সংক্ষিপ্ত রূপ। ইন্টারনেট, মোবাইল, টেলিফোনের যুগে দাঁড়িয়ে এর আগে ইতিমধ্যেই অবলুপ্ত হয়েছে টেলিগ্রাম। এবার অবলুপ্ত হতে চলেছে ফ্যাক্সও। সম্প্রতি তেমনই জানাল ব্রিটেনের টেলিকম সংস্থা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ফ্যাক্স এবং টেলিগ্রামই ছিল সে-দেশের প্রশাসনিক তথ্য চালাচালির অন্যতম মাধ্যম। শুধু প্রশাসনিক বললে খানিক কমই বলা হবে বরং, কারণ শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, ক্রীড়া মাধ্যম থেকে সংবাদবাদ মাধ্যম— ব্রিটেনের সর্বত্রই ব্যবহৃত হত ফ্যাক্স। নব্বই-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রযুক্তির দিক থেকে অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলির পরিস্থিতি আকস্মিকভাবে বদলাতে থাকলেও, ব্রিটিশ পরিষেবার মেরুদণ্ড হয়ে টিকে যায় ফ্যাক্স ও টেলিগ্রাম।
২০০৩ সালে ব্রিটিশ টেলিকম সংস্থা ‘অফকম’ জানিয়েছিল, সাধারণ মানুষ ইমেইল ও অনলাইন মেসেজিং পরিষেবার সঙ্গে ততটাও স্বাচ্ছন্দ্য নয়। কাজেই সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই ফ্যাক্স বর্জন করা হয়নি সে-সময়। তবে ফ্যাক্স-বর্জন বিলম্বিত হওয়ায় সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রিটেনের একাধিক পরিষেবা, সম্প্রতি এমনটাই জানাচ্ছে একাধিক সমীক্ষা। পাশাপাশি, ফ্যাক্সের নানা বিকল্পও পাওয়া যায় বাজারে, যা আরও দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করতে পারে ফ্যাক্সের কাজ। এই বিষয়টিকে বিবেচনা করেই এবার ফ্যাক্সে ইতি টানতে চলেছে ব্রিটেন।
বর্তমানে ব্রিটেনের পরিবহন, চিকিৎসা, আইন এবং শিক্ষা দপ্তরে ব্যবহৃত হয় ফ্যাক্স। ২০১৮ সালেই জানানো হয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে ফ্যাক্স বর্জন করবে স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে মহামারীর কারণে হয়ে ওঠেনি তেমনটা। এবার করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর ফ্যাক্স বর্জনের ডাক দিল ‘অফকম’। ইতিমধ্যেই নতুন ফ্যাক্স যন্ত্রের বিক্রি বন্ধ হয়েছে সে-দেশে। মনে করা হচ্ছে, ২০২৩-এর শুরুতেই সম্পূর্ণ পরিষেবা বন্ধের বিবৃতি জারি করবে ব্রিটিশ টেলিকম সংস্থা…
Powered by Froala Editor