বাবা-মা এবং একমাত্র সন্তানের ছোট্ট সংসার। দিব্যি সুখী জীবন। কোনো অতিথি বাড়িতে এলেই জ্যাডের মুখে হাসি খেলে যায়। একমুখ হাসি নিয়ে তিনি প্রথমেই বলেন, তাঁর ছেলে একজন ডাক্তার। হ্যাঁ, এই কথাটুকু বলার মধ্যে একটা তৃপ্তি পান তিনি। নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার তৃপ্তি তো বটেই। তার থেকেও বড়ো তৃপ্তি পান এই সমাজকে তার নানা ভুল ধারণার উত্তর দিতে পেরে। যে সমাজ মনে করেছিল জ্যাড (Jad Issa) কোনোদিন বাবা হতে পারবেন না। সন্তানের জন্ম তো তিনি দিয়েছেনই, সেইসঙ্গে তাকে জীবনে প্রতিষ্ঠিতও করতে পেরেছেন। এটাই তাঁর তৃপ্তি।
ডাউন সিন্ড্রোম নিয়ে জন্মেছিলেন জ্যাড। অন্যান্য জিনঘটিত রোগের মতোই ডাউন সিন্ড্রোম (Down Syndrome) নিয়েও সমাজে প্রচলিত আছে নানা ভুল ধারণা। আর তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো ভুল ধারণাটি হল, ডাউন সিন্ড্রোম আক্রান্ত রোগীরা কখনও সন্তানের জন্ম দিতে পারেন না। আবার অনেকে মনে করেন, সন্তানের জন্ম দিলে সেই সন্তানের মধ্যেও ডাউন সিন্ড্রোম দেখা দেয়। তাই জ্যাডের সংসারেও যখন সেডারের জন্ম হল, তখন অনেকেই সন্দেহের চোখে তাকিয়েছিলেন। আবার প্রতিবেশীদের অনেকে যুক্তি দিয়ে পাশে এসেও দাঁড়িয়েছিলেন। বিদ্রূপকারীদের সমস্ত অবজ্ঞাকে উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত সন্তানকে মানুষ করার স্বপ্নে জয়ী হয়েছেন জ্যাড।
সেডার এখন একজন ডেন্টিস্ট। আসলে ছোট থেকেই বাবার স্বপ্নটাই তাঁর মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল। তিনি জানতেন, ডাক্তার তাঁকে হতেই হবে। জ্যাডের আয় বেশি নয়। ছোটো একটি ময়দা কারখানায় কাজ করতেন তিনি। তার মধ্যেই একটু একটু করে সেডারের উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থ জমাতেন। কারণ তিনি জানতেন, ডাক্তারি পড়ার অনেক খরচ। সেডারও বাবার সেই স্বপ্নকে নিয়েই বেড়ে উঠেছেন। আর দেখেছেন বাবা-মায়ের ভালোবাসা। প্রায় ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবন পেরিয়ে এসে এখনও সেই ভালোবাসায় কোথাও চিড় ধরেনি। এই ভালোবাসাই তাঁকে সবসময় অনুপ্রেরণা যোগায়। সামাজিক মাধ্যমে বাবা-মায়ের সঙ্গে ছবি দিয়ে এমনটাই লিখেছেন তিনি।
আসলে ভালোবাসার কাছে সব প্রতিবন্ধকতাকেই হার মানতে হয়। আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মানো মানুষদের জীবনে এটুকুই চাহিদা। শুধু কিছু সামাজিক ভ্রান্ত ধারণা তাঁদের সেই ভালোবাসা থেকে সবসময় বঞ্চিত করে রাখে। অথচ একটু ভালোবাসা পেলেই যে দৃশ্যটা বদলে যেতে পারে, জ্যাডের কাহিনি সেটাই প্রমাণ করল আবার।
আরও পড়ুন
ব্রিটেনের টিভি চ্যানেলের উপস্থাপনায় ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত যুবক
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ডাউন সিনড্রোমকে হারিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি তরুণ ফটোগ্রাফারের