চলে গেলেন লাপিয়ারের ‘সিটি অফ জয়’-এর অনুপ্রেরণা ফাদার ল্যাবোর্দি

১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয় লাপিয়ারের উপন্যাস ‘সিটি অফ জয়’। কলকাতা, হাওড়া ও শহরতলির প্রেক্ষাপটে লেখা এই উপন্যাস মুগ্ধ করেছিল সারা পৃথিবীর পাঠককে। আর সেইসঙ্গে প্রত্যেকে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্টিফেন কোভালস্কি চরিত্রটির দ্বারা। ভাবতে অবাক লাগে, স্পটলাইটের আড়ালে সত্যিই ছিলেন এমন একটি চরিত্র। হাওড়া জেলার আন্দুল রোডের ধারে পিলখানা ও অন্যান্য বস্তিতে অভাবী মানুষদের প্রতি অবারিত ছিল তাঁর হাত। সোমবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ফাদার ল্যাবোর্দি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

১৯২৭ সালে প্যারিস শহরে জন্ম ফ্রান্সিস ল্যাবোর্দি। দর্শন নিয়ে পড়াশোনার সময়েই তাঁর মধ্যে খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়। পড়াশোনা শেষ করে ১৯৫১ সালে প্রিস্ট হিসাবে দীক্ষা নিলেন। আর তারপরেই মানবতার মন্ত্র নিয়ে চলে এলেন সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া ভারতবর্ষে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা মিললেও দারিদ্র, লাঞ্ছনা আর বঞ্চনা অধিকাংশ ভারতবাসীর তখনও নিত্যসঙ্গী। এই সময়েই কার্ডিনাল পিচের কথা মতো তিনি চলে আসেন হাওড়ার নির্মলা মাতা মারিয়া গির্জায়। গির্জার কাজের পাশাপাশি ঘুরে দেখতে শুরু করেন আশেপাশের মানুষদের। তাঁদের অভাব, অসহায়তা তাঁর মনে আন্দোলন সৃষ্টি করে। আর এর পরেই শুরু হয় তাঁর মানবসেবার কাজ।

মূলত ছোটোদের প্রতিই ফাদার ল্যাবোর্দির আগ্রহ ছিল বেশি। তাদের সুস্থ পরিবেশ, উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়াই ছিল প্রধান কাজ। এমনকি কোনো প্রতিবন্ধী শিশু জন্মালেও আর দুশ্চিন্তা হত না বস্তিবাসী মানুষদের। ফাদার ল্যাবোর্দি নিজেই তার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। জনসেবার স্বীকৃতি হিসাবে দুবার ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান লিজিয়ন ডি’অনার পেয়েছেন। গত বছরই ফরাসি রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জিগলার হাওড়ায় এসেছিলেন তাঁর পুরস্কার আর স্মারক নিয়ে। তবে ছোটো ছোটো শিশুদের মুখের হাসিই ছিল ফাদারের সবচেয়ে বড়ো পুরস্কার। ফাদারের মৃত্যুতে সেই হাসিমুখগুলিতেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

Powered by Froala Editor

Latest News See More