ভারতের বিনোদন জগতে আবারও এক নক্ষত্রপতনের সাক্ষী থাকল ২০২০ সাল। ১০ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আধুনিক নৃত্যুশিল্পের অন্যতম কিংবদন্তি আস্তাদ দেবু। তাঁর পরিবারের তরফ থেকে সামাজিক মাধ্যমে মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়। সামান্য অসুস্থতায় ভুগছিলেন কিছুদিন। আর তাতেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যু ঘটল আস্তাদ দেবুর।
স্বাধীনতার ঠিক একমাস আগে গুজরাটের পার্সি পরিবারে জন্ম আস্তাদের। যদিও জন্মের পরেই চলে আসেন কলকাতায়। ছেলেবেলা কেটেছে এখানেই। ১৯৫৩ সালে আস্তাদের যখন ৬ বছর বয়স, তখন বাবার কাজের সূত্রে চলে যেতে হল জামশেদপুর। নৃত্যশিক্ষার শুরুও সেখানেই। প্রথমে কত্থক শিখতে শুরু করলেও, কিছুদিনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক শৈলীর প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। আর এই সময় মুম্বাই গিয়ে পরিচয় হয় মার্থা গ্রাহাম নৃত্যশৈলীর সঙ্গে। তবে এই শৈলী শিখতে হলে যেতে হবে আমেরিকায়। তার খরচ তো সাধারণ একজন কলেজ পড়ুয়ার কাছে নেই।
শেষ পর্যন্ত একরকম মনের জোরেই মুম্বাই ছাড়লেন আস্তাদ। একটি মালবাহী জাহাজে চড়ে বসলেন ১৯৬৯ সালে। তারপর সোজা ইংল্যান্ড। ইউরোপের নানা দেশ ঘুরে আমেরিকা পৌঁছাতে লেগে গেল আরও ৫ বছর। ১৯৭৪ সালে নিউ ইয়র্কের মার্থা গ্রাহাম সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি আর্টে ভর্তি হলেন তিনি। এরপর লন্ডন। তারপর ইউরোপের নানা দেশ ঘুরে নানা ধরনের নাচের শৈলী শিখতে লাগলেন। অবশেষে ১৯৭৭ সালে ভারতে ফিরলেন। কিন্তু শিক্ষার খিদে তাঁর তখনও মেটেনি। ভারতে এসে শিখতে শুরু করলেন কথাকলি নাচ। আর এর পরেই নানা শৈলীর নাচ মিশিয়ে একটি নিজস্ব ভঙ্গি তৈরি করলেন তিনি। বলা হয় ভারতের নৃত্যশিল্পের ইতিহাসে সেই প্রথম আধুনিকতার ছোঁয়া লাগল।
পিনা বাউস, আলিসন বেকারের মতো আন্তর্জাতিক শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন আস্তাদ দেবু। কাজ করেছেন ব্লুজ ব্যান্ড ‘পিংক ফ্লয়েড’-এর সঙ্গেও। আবার বলিউডে মণিরত্নম বিশাল ভরদ্বাজের মতো শিল্পীর সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। তবে তাঁর সমস্ত কাজের মধ্যে আলাদা করে বলতেই হয় মকবুল ফিদা হোসেন পরিচালিত ‘মীনাক্ষী’ ছবির কথা। নৃত্যশিল্পে অবদানের জন্য পেয়েছেন নানা সম্মান। ১৯৯৫ সালে পেয়েছেন সঙ্গীত-নাটক অ্যাকাডেমি পুরষ্কার। ২০০৭ সালে পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। শেষ বয়স পর্যন্ত মঞ্চ ছাড়েননি আস্তাদ দেবু। গতবছর তাঁরই নেতৃত্বে একদল অনাথ ছেলেমেয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘ব্রেকিং বাউন্ডারিজ’ নামের একটি অনুষ্ঠান। আস্তাদ দেবুর হঠাৎ মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ভারতের বিনোদন জগত।
Powered by Froala Editor