মায়াবী সুর ও টমবয় পপস্টারের অ্যালবাম

‘ছেঁড়া ঘুড়ি, রঙিন বল’

দ্বিতীয় পর্ব

কেন গানকে নিজের কেরিয়ার বলে বেছে নিলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন এটি খুব গতানুগতিকভাবে ঘটে যাওয়া একটা বিষয়মাত্র। ১৯৬৪ সালের ১২ই মার্চ জন্ম তাঁর। সুরের চিরকালীন ধারা নিয়েই কাজ করে গেছেন বরাবর। প্রথম অ্যালবাম ‘ইয়াদ পিয়া কি আনে লাগি’, ১৯৯৮-এ। কাস্টে ১৬ বছরের রিয়া সেন। সুরে গুজরাটের ছাপ। প্রতি গানেই নতুন নতুন ভালোবাসার গল্প, নব্বইয়ের অন্যতম পপস্টার তিনি, ফাল্গুনী পাঠক।

প্রথম পর্ব
গোলাপি সাইকেল ও রঙিন ছেলেবেলার নব্বই

ডেবিউ অ্যালবামেই এক বিরাট সাফল্য লাভ করেন এই গায়িকা। কেবল সুর নয়, সদ্য আসা কালার টিভির কৈশোরে এক প্রশ্রয়ের নাম ছিল ফাল্গুনী পাঠক। তাঁর প্রতিটি মিউজিক ভিডিওয় একটি করে পরিচ্ছন্ন গল্প। তখনকার জুনিয়র আর্টিস্টদের নিয়ে শ্যুট হওয়া এসব ভিডিওর অনেকেই পরে বলিউড মাতিয়েছেন।

আমরা ক্লাস ফাইভ সিক্স হব, স্কুল থেকে ফিরে বিকেলের লুকোনো টিভি দেখায় কয়েকটি গানের চ্যানেল। সেখানে মিষ্টি সব প্রেমের ভিডিও। কোথাও কলেজ ফেস্টিভাল থেকে তৈরি হওয়া প্রেম কোথাও লাইভ কনসার্ট শুনতে গিয়ে গাড়ির চাবি হারানো, কোথাও আবার কলেজ এক্সকারশনে গিয়ে খেলায় খেলায় প্রেম জমে ওঠে তরুণ তরুণীদের, “সাওয়ান মে, মোরনি বানকে ম্যা তো ছামছাম নাচু...”।

https://www.youtube.com/watch?v=DwbaFnjxDo0

সাদা জামা আর নীল ফ্রক পরা মেয়েটি কীভাবে যেন আমাদের কোয়েড স্কুলের ফার্স্ট বেঞ্চে বসা গম্ভীর রিয়ার মতো দেখতে হয়ে যেত! এক অলীক কল্পনায় তার সঙ্গে স্লো সাইকেল রেসে নিজেকে দেখতে পেয়েছি প্রতিবার।

কলেজ ফেস্টের রিহার্সালে বসা একটি মেয়ে প্রেমিকের পিঠের পিছন দিয়ে হাত বাড়িয়ে আরেক বন্ধুর হাত জড়িয়ে ধরছে। অবিশ্বাস্য লেগেছে। ‘তুনে পায়েল হে ছানকাই...’। একটি মেয়ের পাপেট শো-এর রিহার্সালে জল ঢেলে চলে যাচ্ছে তারই এক ব্যাচমেট। এসব নেগেটিভিটির পরও ভালো কিছুর সন্ধান দিয়ে গেছেন তিনি প্রতিবার। প্রতিটি ভিডিওই সুখের চিলেকোঠায় শেষ হয়েছে।

https://www.youtube.com/watch?v=0tjVtYtZ384

নামেই তিনি নব্বইয়ের, এখনও ভুলবশত একটি গান শুনে ফেললেই বাকিগুলি খুঁজে পরপর শুনে নেন অনেকেই। এখনও ইউটিউবে বহু বহু ভিউ পায় ফাল্গুনীর গান। একটা গোটা প্রজন্মকে যৌনতা আর শরীরী সুড়সুড়ি না দিয়ে কেবল রূপকথার মতো গল্প শুনিয়ে গেছেন তিনি। কেবল গায়িকা নন, ফাল্গুনী পাঠক এক অদ্ভুত ভালোলাগা। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরও গাছের জলে ভিজে যাওয়ার মতো স্নেহময় তাঁর গানের সম্ভার আরও বহুদিন নস্টালজিয়ায় ভোগাক আমাদের...