ভুয়ো এনকাউন্টারে হত্যা, আদিবাসী যুবকের মৃতদেহ সংরক্ষণ করে প্রতিবাদ ছত্তিশগড়ে

মাটির মধ্যে খোঁড়া হয়েছে একটি প্রমাণ আয়তনের সমাধি। তবে তাতে কফিন নেই কোনো। বরং, প্লাস্টিকের মোড়কে ভেষজ তেল, লবণ এবং বিভিন্ন ঔষধি উপকরণ মাখিয়ে শায়িত আছে একটি মানবদেহ। এই দৃশ্য দেখলে আপনা থেকেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে ‘মমি’ কথাটা। তবে মিশরে নয়, এই দৃশ্য ভারতের ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh)। তাহলে ছত্তিশগড়েও কি এই ধরনের কোনো উপজাতি প্রথা বিদ্যমান ছিল সকলের অজান্তেই? 

না, ব্যাপারটা একেবারেই তেমন নয়। কিছুদিন আগেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছিল তামিল চলচ্চিত্র ‘জয় ভীম’। তবে সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রটি নির্মিত এক বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষিতেই। নব্বইয়ের দশকে তামিল উপজাতি সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি, রাজকান্নুকে নির্মম ভাবে ভুয়ো এনকাউন্টারে হত্যা করেছিল পুলিশ। প্রায় তিন দশক পেরিয়ে এসে আজও ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় বিরাজমান ভুয়ো এনকাউন্টারের ঘটনা। আর বছর দুয়েক আগে এভাবেই প্রাণ হারিয়েছিলেন ছত্তিশগড়ের ২২ বছর বয়সী আদিবাসী যুবক বদরু মাদাভি (Badru Madavi)। তাঁর দেহই মমির মতো সংরক্ষণ করে রেখেছে তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষজন। অনৈতিকতার প্রতিবাদ হিসাবেই। 

দিনটা ছিল ১৯ মার্চ। ২০২০ সাল। অরণ্যে মহুয়া ফুল সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন বদরু এবং তাঁর দাদা। সেইসময়ই ছত্তিশগড়ের সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স এবং ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ডসের যৌথ অভিযানে নিহত হন বদরু। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি ছিল, বদরু গাঙ্গালুর এরিয়া নামক একটি মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং তিনি একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। তাঁর মাথার দামও ধার্য হয়েছিল ২ লক্ষ টাকা। 

তবে দান্তেওয়াড়ার গামপুর গ্রামের বাসিন্দারা প্রশাসনের এই দাবি নস্যাৎ করেই জানিয়েছেন, এই ধরনের কোনো সংগঠনের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল না বদরুর। হত্যাকাণ্ডের দিন থেকেই সরকারি দপ্তরে গ্রামবাসীরা আবেদন করেছিলেন বিশেষ তদন্ত কমিটি তৈরি করার। ২২ বছরের যুবক যাতে প্রকৃত ন্যায়বিচার পায়, তার জন্যই দ্বারস্থ হয়েছিলেন পুলিশের দপ্তরে। তবে কাজ হয়নি কোনো। অন্যথায় বদরুর মৃতদেহ সংরক্ষণের পথ বেছে নেন তাঁরা। তাতেও যে লাভ হয়েছে কিছু এমনটা নয়। দেহাবশেষের অধিকাংশটাই পচে গেলেও, প্রতিবাদ অবস্থান থেকে সরে আসতে নারাজ গ্রামবাসীরা। 

আরও পড়ুন
সিকল-সেল অ্যানিমিয়া নিয়েই বিশেষভাবে সক্ষমদের পাশে ছত্তিশগড়ের যুবক

সারকেগুদা হত্যাকাণ্ড বা এডেসমেটা ঘটনা— উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষসদের ওপর একাধিকবার নেমে এসেছে প্রশাসনের আগ্রাসন। প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। এমনকি ছত্তিশগড়ের সংশ্লিষ্ট গ্রামেই কয়েক মাস আগে ঘটে আগে আরও একটি মিথ্যা এনকাউন্টার। এই ধারাবাহিক অনৈতিকতায় যাতে ইতি পড়ে, তার জন্যই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরা…

আরও পড়ুন
বাঁশ দিয়ে সাইকেল! উদ্যোগ ছত্তিশগড়ে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বৃক্ষচ্ছেদন রুখতে গাছের গায়ে ভগবানের ছবি সাঁটা ছত্তিশগড়ে