ধরুন বাড়িতে বসেই যদি সশরীরে ঘুরে আসা যেত দার্জিলিং, কাশ্মীর কিংবা ভেনিস? বা নিদেনপক্ষে প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা জমানো যেত কোনো ক্যাফেটেরিয়ায়? ভাবছেন এ কেমন কথা! অবাস্তব লাগাটাই যে স্বাভাবিক, কেননা এমন ঘটনার কথা শুধু দেখতে পাওয়া যায় সায়েন্স-ফিকশনের গল্পে। তবে আর কিছুদিনের মধ্যে এই প্রযুক্তি আসতে চলেছে মানুষের হাতে। সৌজন্যে বিশ্বের অন্যতম সামাজিক মাধ্যম সংস্থা ফেসবুক।
বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির পরিভাষায় এই ভার্চুয়াল কল্পজগতের নাম ‘মেটাভার্স’। তবে মেটাভার্সের এই পরিকল্পনা আজকের নয়। কল্পনাজগৎ আর বাস্তবকে এক রেখায় আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে বহুদিন আগে থেকেই। ১৯৯২ সাল। সেবছর প্রকাশিত হয়েছিল সাই-ফাই উপন্যাস ‘স্নো ক্র্যাশ’। কল্পবিজ্ঞানের সেই উপন্যাসে দেখানো হয় ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি হেডসেটের মাধ্যমে এক কাল্পনিক জগতে দিব্যি বেঁচে-পরতে রয়েছেন গল্পের চরিত্ররা। পরবর্তীতে ‘অবতার’, ‘ট্রন’ কিংবা ‘লুসি’-র মতো চলচ্চিত্রেও ফুটে ওঠে মেটাভার্স। বিশ শতকের শুরু থেকেই এই প্রযুক্তিকে বাস্তবায়িত করতে শুরু হয়েছিল বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির ইঁদুরদৌড়। অনেকাংশেই এগিয়েওছে সেই কাজ।
এই ‘প্রতিযোগিতায়’ সম্প্রতি নতুন করে নাম লেখাল ফেসবুক। সম্প্রতি, ‘দ্য ভার্জ’-এর একটি সাক্ষাৎকারে নিজস্ব মেটাভার্স তৈরির পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে আনলেন ফেসবুক সিইও মার্ক জুকেরবার্গ। এমনকি তাঁর দাবি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই এই ভার্চুয়াল জগত তৈরি করে ফেলবে ফেসবুক। আর এই প্রযুক্তির ওপর ভর করেই আগামীতে বিপ্লব আসতে চলেছে ইন্টারনেট দুনিয়ায়।
জুকেরবার্গ জানাচ্ছেন, দ্বিমাত্রিক স্ক্রিন-এ নয়, বরং ত্রি-মাত্রিক এক কল্পজগতে আগামীদিনে যোগাযোগ সম্ভব হবে মানুষের। আর তার জন্য শুধুমাত্র একটি হেডসেট পরে নিতে হবে ব্যবহারকারীকে। মেটাভার্সে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর বাস্তব চেহারার সঙ্গে সাদৃশ্য রেখেই বানানো হবে অবতার। ব্যবহারকারী কথা বললে বা অঙ্গভঙ্গি করলে, সেই অবতাররাও প্রতিক্রিয়া দেবে একইভাবে। নিজের ঘরে হেঁটেই কল্পদুনিয়াতেও চলাচল করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। যাকে বলে, নিজের বাড়িতে থেকেও অন্য এক জগতে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতিপ্রাপ্তি।
আরও পড়ুন
কেন্দ্রের শর্তে সম্মতি ফেসবুক-টুইটারের, শীঘ্রই কোপ পড়বে ব্যক্তিস্বাধীনতায়?
তবে শুধুই কি বিনোদন? বর্তমানে, মহামারী এবং লকডাউনের কারণে চল বেড়েছে ওয়ার্ক-ফ্রম-হোমের। বাড়িতেই ‘স্থানান্তরিত’ হয়েছে কর্মক্ষেত্র। নিও-নর্মাল পরিস্থিতির এই বদল যে দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে আগামীতে, সে কথা মাথায় রেখে ভার্চুয়াল কর্মক্ষেত্র তৈরির বিষয়টিতেও জোর দিচ্ছেন ফেসবুক সিইও। জুকেরবার্গ এই বিশেষ ভার্চুয়াল কর্মক্ষেত্রের নাম দিয়েছেন ‘ইনফিনিট অফিস’।
আরও পড়ুন
তুরস্কে ব্যবসা বাঁচাতে বাক্-স্বাধীনতায় ‘হস্তক্ষেপ’ ফেসবুকের
২০১৪ সালে প্রথম ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি নিয়ে কাজ শুরু করেছিল ফেসবুক। বিনিয়োগ করেছিল প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে চালু করেছিল একটি ‘হরাইজন’ নামের একটি ‘ভার্চুয়াল স্পেস’। এবার সেই প্রযুক্তিকে আরও জোরদার করে বাজার দখল করতে ঝাঁপাল ফেসবুক। তবে এই নতুন প্রযুক্তি চলে আসার পর ঠিক কতটা বদলে যাবে আমাদের জীবন, তা জানার জন্য এখনও অপেক্ষা পাঁচ বছরের…
Powered by Froala Editor