গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল জল্পনা। সত্যিই কি বন্ধ হয়ে যাবে ফেসবুক? অন্তত ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে তেমনটাই কড়াভাবে জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। জানানো হয়েছিল, ২৬ তারিখ থেকেই ভারতে আর ব্যবহার করা যাবে না এই প্ল্যাটফর্মগুলি। তবে গতকাল রাতে শেষ মুহূর্তে ভারতের তথ্য প্রযুক্তি আইন মেনে চলার আশ্বাস দিল ফেসবুক ও টুইটার। তবে আকস্মিক সেই বদলগুলি করা সম্ভব নয় বলেই বিবৃতিতে জানিয়েছে সংস্থাগুলি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে তথ্য প্রযুক্তি আইন লাগু করেছিল কেন্দ্র। সোশ্যাল মিডিয়ার এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির জন্য প্রকাশিত হয়েছিল বিশেষ গাইডলাইন। সেই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল, কোনো ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে আপত্তিজনক কিছু পোস্ট করলে তাঁকে হাজির করা হবে আদালতে। এই নতুন গাইডলাইন মেনেই প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাকে ব্যবহারকারীর শর্তাবলি বদলের নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৩ মাসের সময়সীমা। কিন্তু ভারতীয় সংস্থা ‘কু’ ছাড়া আর কেউই নিয়মাবলি পরিবর্তন করার আগ্রহ দেখায়নি। আর সেখানেই সংঘাত বাঁধে কেন্দ্রের সঙ্গে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, কীভাবে চলবে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরে এই নজরদারি? এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিটি সংস্থাকেই রাখতে হবে নিজস্ব কিছু কমপ্লায়েন্ট অফিসার। যাঁরা তদারকি করবেন গোটা বিষয়টার। সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্টে আপত্তিজনক কিছু দেখলে তা সরিয়ে দেওয়া ছাড়াও সেই বিষয়ে সরকারের কাছে অভিযোগ দায়ের করবেন তাঁরা।
ফেসবুক, টুইটার গতকাল তাদের বিবৃতিতে আরও বেশি করে জোর দিয়েছে এই বিষয়টিতেই। কোভিড পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেই তারা জানিয়েছে, মহামারীর চলাকালীন সময়ে তেমন পরিকাঠামো দ্রুত গঠন করা সম্ভব নয়। তবে কেন্দ্রের দেওয়া নির্দেশিকা মানতে যে আগ্রহী তারা, স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সেই কথাও। তবে শুধু ফেসবুক-টুইটারই নয়, এদিন কেন্দ্রকে লিখিত আবেদন করেছে ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল, কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি-সহ মোট পাঁচটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। দাবি একটাই, মহামারীর কারণে উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরিতে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন
তুরস্কে ব্যবসা বাঁচাতে বাক্-স্বাধীনতায় ‘হস্তক্ষেপ’ ফেসবুকের
অন্যদিকে আরও একটি সমস্যার কথা উঠে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিবৃতিতে। নির্দেশিকায় কেন্দ্র বার বার আপত্তিকর পোস্টের কথা উল্লেখ করলেও, কীসের ভিত্তিতে সেই বিচার করা হবে— স্পষ্ট করে দেওয়া হয়নি সেই বিষয়টি। ফলে, সেই শর্তাবলি নির্ধারণের জন্যও কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার আবেদন জানিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলি। সেইসঙ্গে নীতি সংশোধন এবং পরিকাঠামো গঠনের জন্য আরও এক বছর সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করেছে সংস্থাগুলি।
আরও পড়ুন
ফেসবুক মার্কেটপ্লেসেই বিক্রি হচ্ছে আমাজনের বনভূমি, প্রশাসনের নাকের ডগায় বে-আইনি ব্যবসা
তবে গতকাল রাত পর্যন্তও সংস্থাগুলির এই আবেদনে কোনো সাড়া দেয়নি কেন্দ্র। ফলে এক্ষুনিই ফেসবুক বা টুইটারের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে কিনা, তা বলা যাচ্ছে না স্পষ্ট করে। অন্যদিকে ভারতে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাগুলির বিপুল পরিধির ব্যবসা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায়, তারাও যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে যথেষ্টই। সেক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক মধ্যস্থতায় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ না হলেও তাদের বিরুদ্ধে বড়োজোর জারি হতে পারে ফৌজিদারি মামলা অথবা আর্থিকভাবে জরিমানা দিতে হতে পারে তাদের। তবে অব্যাহত থাকবে পরিষেবা, এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন
একটি যুগের অবসান, ফেসবুক থেকে সরে যাচ্ছে জনপ্রিয় গেম ‘ফার্মভিল’
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে সামনে এসেছে একাধিকবার। অনেকক্ষেত্রে তার পরিণতিও হয়েছে ভয়ঙ্কর। কোনো কোনোক্ষেত্রে হিংসাও ছড়িয়ে পড়েছে আগুনের মতো। তৈরি হয়েছে সামাজিক অস্থিরতা। ফলে অস্বীকার করার জায়গা নেই, সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্টকে যাচাই করার প্রয়োজন হয়ে উঠেছিল অতি-আবশ্যিক। কিন্তু সংশয় থেকে যাচ্ছে অন্য একটি জায়গায়। হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটিই হোক কিংবা ফেসবুকে ভুয়ো খবর ছড়ানোর জন্য বেশিরভাগ সময়ই আঙুল উঠেছে শাসক গোষ্ঠীর দিকেই। এই আইন প্রনয়ণে সেই গোষ্ঠীরই তৎপরতা যেন নতুন করে জাগিয়ে তুলছে আশঙ্কা। সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে বিরোধী কণ্ঠস্বর বন্ধ করে দেবে না তো সরকার? জানা নেই উত্তর...
Powered by Froala Editor