দুর্গম স্থানে জামা ইস্ত্রি করাই চ্যালেঞ্জ, পৃথিবীর অদ্ভুততম খেলা ‘এক্সট্রিম আয়রনিং’

মাটির সঙ্গে প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে আকাশ ছুঁয়েছে পর্বতের পাথুরে দেওয়াল। ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১২ হাজার ফুট। সেই পাহাড়ের গায়েই ড্রিল করে টেবিলের মতো করে লাগানো হয়েছে ছোট্ট একটি বোর্ড। তাতে জামা রেখে ইস্ত্রি করছেন এক পর্বতারোহী। সম্পূর্ণ ঝুলন্ত অবস্থাতেই। কেবলমাত্র কোমরের সঙ্গে বাঁধা দড়িটুকুই ভরসা। 

পর্বতারোহীর এই কর্মকাণ্ডকে ‘উন্মত্ততা’ মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু বিষয়টা একেবারেই তেমন নয়। বরং, এটা একটা খেলা। বা বলা ভালো পৃথিবীর কঠিনতম, ঝুঁকিপূর্ণ ও সবচেয়ে বিস্ময়কর খেলা। এক্সট্রিম আইরনিং (Extreme Ironing)। ইউরোপ তো বটেই, সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় গোটা বিশ্বেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই আউটডোর স্পোর্ট।

১৯৮০ সাল। ইংল্যান্ডের সেটেলের নিকটবর্তী ইয়র্কশায়ারের ডেলস ন্যাশনাল পার্কে কয়েকদিনের জন্য ট্রেকিং-এ গিয়েছিলেন টনি হিয়াম এবং তাঁর ভগ্নিপতি জন স্লেটার। তবে দুর্গম সেই পার্বত্য উপত্যকাতে গিয়েও পোশাকের প্রতি এতটুকু যত্ন হারাননি টনি এবং জন। খাবার কিংবা পানীয়ের জোগাড় হোক কিংবা নাই হোক, ট্রেকিং-এ গিয়েও একদিনের জন্য জামা-কাপড় ইস্ত্রি করতে ভোলেননি তাঁরা। 

ছোট্ট তাঁবুর মধ্যে তো বটেই, জনাকীর্ণ বিমানবন্দর, এমনকি পর্বতারোহনের সময়ও পোশাক আয়রন করেছিলেন এই দুই ব্রিটিশ আরোহীরা। ‘পরিচ্ছন্নতা’-র প্রতীক হিসাবে বেশ কিছু ছবিও তুলেছিলেন তাঁরা। তখনও ইন্টারনেট ঢুকে পড়েনি মানুষের জীবনে। তবে সংবাদমাধ্যমের দৌলতে প্রকাশ্যে এসেছিল সেই অদ্ভুত রোমাঞ্চকর কীর্তির ছবি।

আরও পড়ুন
ফুটবলের ‘কবীর খান’: আদিবাসী মেয়েদের খেলা শিখিয়েই হারানো স্বপ্নের খোঁজ কোচের

জন ও টনির সেই কর্মকাণ্ডই যে এতটা মাদকতা জাগাবে সাধারণের মনে— তা নিজেরাও জানতেন না তাঁরা। তাঁদের দেখা-দেখি বহু পর্বতারোহীই শুরু করেছিলেন ক্যাম্পিং-এর সময় নিয়ম করে আয়রনের ব্যবহার। চলতি শতাব্দীর শুরুতে ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়া চলে আসার পর, রীতিমতো ভাইরাল হতে থাকে ‘আয়রনিং’-এর ছবি। অধিকাংশ সময়েই সেখানে উল্লেখিত হত ‘এক্সট্রিম আয়রনিং’ কথাটি। 

আরও পড়ুন
পুজোর খেলা, ভাঙার খেলা

তবে এক্সট্রিম আয়রনিং-এর খেলা হয়ে ওঠা আরও পরে। পর্বত আরোহণে গিয়ে কে কত দ্রুত আয়রন করতে পারবে তাঁদের পোশাক— এমনটা ভেবেই শুরু হয়েছিল নিছক প্রতিযোগিতা। তারপর সেই প্রতিযোগিতার উন্মাদনাতেই গড়ে ওঠে আস্ত একটি সংগঠন ‘এক্সট্রিম আয়রনিং ব্যুরো’। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দুর্গম এবং জনাকীর্ণ অঞ্চলে তাঁরাই আয়োজন করেন আয়রন চ্যাম্পিয়নশিপের। আন্টার্কটিকা, ওয়েলস মার্ট, এমনকি সমুদ্রের তলাতেও আয়োজিত হয়েছে অদ্ভুত এই প্রতিযোগিতা। পৌঁছে গেছে অন্তরীক্ষেও। ছোট্ট হেলিকপ্টারে উড়তে উড়তেও দেখা গেছে মানুষকে জামা আয়রন করতে। 

আরও পড়ুন
গল্প, খেলা নাকি রহস্যোপন্যাস? ওমনিপিডিয়া ও ‘ভবিষ্যতের’ বিশ্বকোষ

যদিও বহু মানুষ ‘এক্সট্রিম আয়রনিং’-কে খেলা বলে মানতে নারাজ এখনও। তবে তাতে কিছুই যায় আসে না ‘আয়রনিস্ট’-দের। তাঁদের সাফ কথা, পর্বতারোহন যদি খেলা হতে পারে, তবে আয়রনিং তার পরবর্তী পর্যায়। এই বিতর্কের সুস্পষ্ট সমাধান মেলেনি আজও। তবে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা হয়তো একদিন এই বিতর্ককে ‘আয়রনি’ করে তুলবে…

Powered by Froala Editor