আকারে বিড়ালের থেকে সামান্য বড়ো, আর গায়ের উপর মেঘের মতো ছোপছোপ দাগ। প্রথম দেখায় তেমন কিছু মনে না হলেও, যাঁরা প্রাণীটিকে চেনেন তাঁরা জানেন এটি একটি ভয়ঙ্কর প্রাণী। নাম ক্লাউডেড লেপার্ড। তাইওয়ানের গ্রামবাসীদের কাছে এ এক অপদেবতা।
তবে এই প্রাণীটিকে চেনে, এমন মানুষের সংখ্যাও এখন হাতে গোনা। ফর্মোসান প্রজাতির এই প্রাণীটি শেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৮৩ সালে। তারপর দীর্ঘদিন তার দেখা না পাওয়ায় প্রাণীটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বলেই ধরে নিয়েছিলেন অনেক। এর মধ্যেই হঠাৎ তাইওয়ানের পাহাড়ি অঞ্চলে গুজব শোনা যায়, জঙ্গলের মধ্যে সেই লেপার্ড আবার দেখা গিয়েছে। গৃহস্থালি থেকে ছাগল, মুরগি এবং অন্যান্য প্রাণীও চুরি যেতে থাকে ক্রমশ। অনেকে লেপার্ডটি দেখেছে বলেও দাবি করে।
প্রাথমিকভাবে পুরোটাই গ্রামবাসীদের অলীক কল্পনা বলে মনে করলেও শেষ পর্যন্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যান বনবিভাগের কর্মীরা। আর তারপরেই দেখা যায়, সত্যিই জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে ক্লাউডেড লেপার্ড। একটি বা দুটি নয়, দল বেঁধে তারা বাস করছে সেখানে। বনবিভাগের কর্মীরাও দুবার দেখেছেন তাদের। আর স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সরকারি মহলেও।
মানুষের ক্রমাগত উৎপীড়নেই জঙ্গল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রাণী। জঙ্গল ফিকে হয়ে আসছে ক্রমশ। নির্বিচারে গাছ কাটার ফলেই ক্রমশ উত্তরে সরে যেতে যেতে একসময় হারিয়ে গিয়েছিল এই প্রাণী। মানুষও যেন ক্রমশ এটা উপলব্ধি করতে পারছে। তাই এই হিংস্র প্রাণীকে ঘিরে গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও, প্রাণীটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন তাঁরা। বনবিভাগের কাছে গ্রামবাসীরা আবেদন করেছেন এদের সুরক্ষার যাবতীয় বন্দোবস্ত করার জন্য। সেইসঙ্গে কেউ যাতে গাছ কেটে এদের বাসভূমি কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকেও লক্ষ রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
হয়তো এভাবেই এবার বিলুপ্তির হাত থেকে বেঁচে যাবে ফর্মোসান ক্লাউডেড লেপার্ড। এটুকু উদ্যোগ হয়তো আরও অনেক প্রাণীকেই বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। তাতে সামগ্রিকভাবে প্রকৃতিরই লাভ হবে।