পাথুরে মাটি। খুঁড়তে খুঁড়তেই পাওয়া গেল অতি প্রাচীন তালপাতা। ঠিক পাতা নয়, পাথরের মধ্যে রয়েছে তালপাতার জীবাশ্ম। না, সমুদ্রের আশেপাশে কোনো জায়গায় নয়। এই জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া গেল হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে, লাদাখের কাছে। অবাক লাগল নিশ্চই? হিমালয়ে তো তাল গাছ জন্মায় না। তাহলে? উত্তর আছে হিমালয়ের ইতিহাসের মধ্যেই। একসময় যে সেখানেই ছিল টেথিস সাগর। যে সাগর তিব্বতের থেকে আলাদা করে রেখেছিল ভারতীয় ভূখণ্ডকে। সেটা অবশ্য লক্ষ লক্ষ বছর আগের কথা। আর এই জীবাশ্মের বয়সও ২ কোটি বছরের কম নয় বলেই মনে করছেন খনকার্যের প্রধান ঋতেশ আর্য।
টেথিস সাগরের বুক থেকেই উত্থিত হয়েছিল ভঙ্গিল পর্বত হিমালয়। তাত্ত্বিকভাবে একথা বারবার প্রমাণ করেছেন ভূতাত্ত্বিকরা। এবার সেই ধারণার পিছনেই অকাট্য যুক্তি হাজির করলেন ঋতেশ। হিমালয়ের বুকে তালপাতার জীবাশ্ম প্রমাণ করে সেখানে একসময় সমুদ্রের অস্তিত্ব ছিল। তার পলির মধ্যেই জমে ছিল এই জীবাশ্ম। আর সেই সমুদ্রের অবস্থানও ছিল খুব সম্ভবত নিরক্ষরেখার কাছাকাছি। তবে এমন অনুসন্ধান এই প্রথম নয়। প্রায় ৩ দশক ধরে হিমালয়ের বুকে সামুদ্রিক গাছের জীবাশ্ম খুঁজে চলেছেন ঋতেশ। মূলত লাদাখ এবং কাসৌলি অঞ্চলেই মিলেছে সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৬৪ সালে মেডলিকট সাহেব কাসৌলি অঞ্চলে খুঁজে পেয়েছিলেন তালপাতার জীবাশ্ম। এই অনুসন্ধানই অনুপ্রেরণা দিয়েছে তাঁকে।
১৯৯৪ সালে মেডলিকট সাহেবের গবেষণার সূত্র ধরেই কাসৌলি অঞ্চলে তালপাতার জীবাশ্ম খুঁজে পান ঋতেশ। তারপর গার্সেনিয়া, গ্লুটা সহ আরও নানা সামুদ্রিক গাছের জীবাশ্ম পেয়েছেন কাসৌলি এবং লাদাখ অঞ্চলে। তবে এত প্রাচীন উদ্ভিদের জীবাশ্ম খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে না। তাদের মাটি থেকে বের করে আনার পর সংরক্ষণ করার কাজটা আরও কঠিন। তবে প্রযুক্তির ক্রম উন্নতিতে এখন অনেকটাই সম্ভব হচ্ছে। মেডলিকট সাহেবের সময় যা সম্ভব ছিল না। তিনি শুধু তাঁর অনুসন্ধানের কথা লিখে যেতে পেরেছেন। তাঁর সংগ্রহ করা জীবাশ্ম আজ আর দেখা যায় না। ঋতেশ আর্যর সংগ্রহ করা ৪ ফুটের তালপাতা কিন্তু ভবিষ্যতের গবেষণাতেও কাজে লাগবে বলেই আশাবাদী তিনি। খুব শিগগিরি হয়তো কোনো জাদুঘরে গিয়ে দেখতে পাওয়া যাবে ২ কোটি বছরের প্রাচীন এই জীবাশ্ম।
Powered by Froala Editor