একদিকে শেষ হয়ে আসছে জীবাশ্ম জ্বালানির ভাণ্ডার। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ কমানোই যে একমাত্র রাস্তা, সেই কথাও বারবার বলছেন বিজ্ঞানীরা। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এবার অচিরাচরিত শক্তি উৎসের ওপর জোর দেওয়ার কথা উঠছে পৃথিবীজুড়ে। তবে এইসমস্ত শক্তি উৎস সম্বন্ধেও বিতর্কের শেষ নেই। বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের সন্দেহ। কার্যক্ষমতার দিক থেকে পারমাণবিক বিদ্যুতের (Nuclear Energy) চেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু একের পর এক দুর্ঘটনার পর এক সময় এই বিকল্পটিকে প্রায় বাদ দিয়েই দিয়েছিলেন সকলে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) কথা মাথায় রেখেই আবারও যেন পারমাণবিক বিদ্যুতের দিকেই ঝুঁকছে সারা পৃথিবী।
ইতিমধ্যে জার্মানিতে পারমাণবিক বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। ইউরোপের নানা দেশ থেকেই সমর্থন পেয়েছে এই আন্দোলন। তবে সেইসঙ্গে থেকে যাচ্ছে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্নও। ফুকুশিমা এবং চের্নোবিল দুর্ঘটনার পরেই পারমাণবিক বিদ্যুৎকে বাতিল করেছিল প্রায় সমস্ত দেশ। কিছু দেশ পুরনো কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেয়। কিছু দেশ নতুন করে নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর বসানো বন্ধ করে। তার বদলে সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ুবিদ্যুতের ওপর জোর দেওয়া হয়। তবে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ উৎসের বিকল্প হিসাবে সৌরবিদ্যুৎ বা বায়ুবিদ্যুতের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হলেও এখনই তাপবিদ্যুতের জায়গা নেওয়ার মতো জায়গায় নেই কোনোটাই। একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎই পারে এই চাহিদা মেটাতে।
অন্যদিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির খরচও বিপুল। তুলনায় সৌরবিদ্যুৎ বা বায়ুবিদ্যুৎ বেশ সস্তা। ফলে পুঁজিপতি এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব নয়। যদিও ইতিমধ্যে ফ্রান্স সরকার তার বার্ষিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭০ শতাংশ পারমাণবিক রিয়্যাক্টর থেকে সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছে। ২০ বছর পর ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড নতুন করে নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর তৈরির কাজ শুরু করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনও পুরনো পারমাণবিক কেন্দ্রগুলি পরিচর্যার জন্য মোটা অঙ্কের প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। আর পারমাণবিক বিদ্যুতের ব্যবহারের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে গিয়েছে চিন। প্রত্যেকেই কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনকেই। পরিবেশ বাঁচাতেই পারমাণবিক বিদ্যুতের কথা ভাবছেন তাঁরা।
তবে এর পরেও বিপক্ষ মতকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রথমত, বিপুল পরিমাণ শক্তির উৎস পারমাণবিক কেন্দ্রগুলি। একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নানা কাজেই লাগানো যায়। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলে কী ঘটতে পারে, তার নমুনা আমরা আগেই দেখেছি। তাছাড়া, শুধুমাত্র কার্বন নিঃসরণই পরিবেশের ক্ষতির একমাত্র কারণ নয়। বিদ্যুতের ব্যবহারই নানা সমস্যা তৈরি করে। সেখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার বা বেতার তরঙ্গের কারণেও বাস্তুতন্ত্রে বিরূপ প্রভাবের কথা উঠে এসেছে বারবার। অথচ পারমাণবিক শক্তির প্রায় অফুরন্ত উৎস মানুষ একবার ব্যবহার করতে শুরু করলে তাতে নিয়ন্ত্রণ আনা মুশকিল। ফলে পরিবেশ সমস্যার কথা বলে পারমাণবিক বিদ্যুতের পক্ষে সওয়াল করা হলেও নানা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ শক্তি নিষ্কাশন, খুলল পদার্থবিদ্যার নতুন দিগন্ত
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কয়লার যোগান নেই, তবু অচিরাচরিত শক্তিতে অনাগ্রহী কেন্দ্র!