কয়েকমাসের মধ্যে একাধিকবার বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব এবং বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা শ্রী আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যেই এসে পড়ল একটি মৃত্যু-হুমকির চিঠি। এই একটি চিঠিই এক সুতোয় বেঁধে দিল আলাপনবাবুর প্রাক্তন সহপাঠীদের। বন্ধুর বিপদে পাশে থাকার আর্জি নিয়ে সই সংগ্রহ শুরু করেছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণমিশন বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা। মূলত তাঁর সহপাঠীদের উদ্যোগেই শুরু হয় এই সই সংগ্রহ।
“আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা আলাপনের সহপাঠী ছিলাম।” বলছিলেন সই সংগ্রহ অভিযানের অন্যতম উদ্যোক্তা অমিত গুহ রায়। তিনি জানালেন, যাঁরা সই করছেন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় আলাদা হতেই পারে। কিন্তু তার জন্য বন্ধুত্বের ভিত্তি কোথাও যেন ক্ষুণ্ণ না হয়। বন্ধুর বিপদে বন্ধুরা সবসময় পাশে থাকবেন, এটাই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণমিশনের চিরাচরিত শিক্ষা। আলাপনবাবুর আরেক সহপাঠী এবং সই সংগ্রহ অভিযানের উদ্যোক্তা অনিন্দ্য ভট্টাচার্যের কথায়, “আলাপন আমাদের সকলের গর্ব। তার বিপদে পাশে দাঁড়াতে না পারলে অপরাধবোধ হত।”
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত জীবনে বেশ কয়েকটা বড়ো ধাক্কা পেয়েছেন আলাপনবাবু। মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে হারিয়েছেন মা, ভাই, এবং এক ভাগ্নেকে। এর মধ্যেই হঠাৎ আলাপনবাবুর স্ত্রী এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটি চিঠি এসে পৌঁছায়। তাতে লেখা থাকে, কেউ আপনার স্বামীকে বাঁচাতে পারবে না। ইতিমধ্যে এই হুমকি চিঠির বিষয়টিতে তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। জানা গিয়েছে, শরৎ বসু রোডের ডাকঘর থেকে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। আকস্মিক এই হুমকির খবর পৌঁছাতেই কিছু একটা করার প্রয়োজন মনে করেন তাঁর সহপাঠীরা।
প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তার মাধ্যমে সই সংগ্রহের বয়ান তৈরি করা হয়। গতকাল থেকে শুরু হয় সই সংগ্রহ। আলাপনবাবুর বহু সহপাঠী, যাঁরা বর্তমানে কর্মসূত্রে বিদেশে আছেন, তাঁরাও ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই অভিযানে সামিল হয়েছেন। এমনকি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের অন্যান্য ব্যাচের পড়ুয়ারাও হাত মিলিয়েছেন রাতারাতি। অমিত গুহ রায় জানালেন, এর আগেও সবসময় বন্ধুদের বিপদে পাশে থেকেছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের পড়ুয়ারা। “করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের চিকিৎসক বন্ধুরা যেভাবে আমাদের এবং আমাদের পরিবারের পাশে থেকেছেন, তা বলা বাহুল্য।” বলছিলেন অমিতবাবু। অনিন্দ্যবাবুর কথাতেও উঠে এল একই বক্তব্য। “নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সমস্ত পড়ুয়া এবং প্রাক্তনী মিলে আসলে এক বৃহত্তর পরিবার। আমরা সেই পরিবারের পক্ষ থেকেই সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আমাদের একজন সদস্য বিপদের মধ্যে রয়েছেন।”
একটিমাত্র পরিচয়কে সামনে রেখেই এগিয়ে এসেছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সমস্ত বন্ধুরা। তাঁদের কেউ কেউ ‘কৃতি’ পড়ুয়া। কেই হয়তো সেই অর্থে ‘সাধারণ’। কেউ ব্যবসা করেন, কেউ সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার নানা পদে রয়েছেন। কিন্তু সেইসব পরিচয়ের থেকে বড়ো কথা, তাঁরা একটি বৃহত্তর পরিবার। এমনটাই জানালেন অমিতবাবু এবং অনিন্দ্যবাবু।
Powered by Froala Editor