তাঁরা অবসর নিয়েছেন বেশ কিছু বছর হয়ে গেল। একসময় দিন কেটেছে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় বা সেবা-শুশ্রূষায়। তারপর নতুনদের হাতে সমস্ত দায়িত্ব তুলে দিয়ে কর্মক্ষেত্র থেকে বিদায় নিয়েছেন। এর মধ্যেই এসে গেল করোনার মহামারী। সারা পৃথিবীর মতোই মহামারীর ছায়া এসে পড়ল ইংল্যান্ডের বুকেও। আর এর মধ্যে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারলেন না তাঁরা। আবারও ফিরলেন কাজে। গলায় তুলে নিলেন স্টেথোস্কোপ। এমনই গল্প ইংল্যান্ডের অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার ও নার্সদের।
ডাক এসেছিল ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস থেকে। তাঁরা বলেছিলেন ‘আপনার এনএইচএস-এর আপনাকে প্রয়োজন’। একসময় কাজ করেছেন যে সংস্থার হয়ে, তার কাছ থেকে এমন ডাক এলে কি উপেক্ষা করা যায়? তাই ফিরে এলেন তাঁরা। আর একজন দুজন নয়। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন ৪৫০০ জন ডাক্তার ও নার্স। আরও একদিনের মধ্যে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৭৫০০-এর উপর। এর মধ্যে বেশিরভাগই নার্স। তবে ডাক্তারের সংখ্যাও প্রায় ২০০০।
দেশজুড়ে করোনার ভয়াবহতাকে প্রতিহত করতে বিশেষ বাহিনী তৈরি করেছে এনএইচএস। নাম দেওয়া হয়েছে 'এনএইচএস আর্মি'। কিন্তু এই কাজের জন্য যতজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার ও নার্স প্রয়োজন, তার জোগান ছিল না বললেই চলে। আর তাই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের কাজে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। আর রাতারাতি সেই আহ্বানে সাড়া মেলে। এমন উষ্ণ প্রতিক্রিয়া পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি সংস্থার কর্ণধার ম্যাট হ্যানকক। তবে এখনও অনেক ডাক্তার ও নার্স প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্তত আরও ২৫০০ কর্মীকে কাজে বহাল করা গেলে হয়তো পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।
শুধু অবসরপ্রাপ্তরাই নন, চিকিৎসার কাজে যুক্ত করা হয়েছে অন্তিম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদেরও। কাগজেকলমে কাজে যোগ দিতে আরও কয়েক মাস বাকি ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই নেমে পড়েছেন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। আর শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার ও নার্স নয়, তাঁদের সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন অনেক তরুণ-তরুণীও। গড়ে তুলেছেন একটি জাতীয় স্তরের স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী।
দেখতে দেখতে মহামারীর আকার নিয়ে নিয়েছে করোনার সংক্রমণ। অধিকাংশ দেশেই লাগু হয়ে গিয়েছে অঘোষিত জরুরি অবস্থা। জরুরি অবস্থা জারি করতে চলেছে ব্রিটেনের পার্লামেন্টও। তবে তার আগেই যুদ্ধে নেমে পড়েছেন ডাক্তার ও নার্সরা। আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসায় তাঁদের ভূমিকাই যে সবচেয়ে বেশি। স্বাভাবিকভাবেই বহু মানুষের প্রশংসা পেয়েছেন ইংল্যান্ডের অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার ও নার্সরা। আর এতজন মানুষের নিরলস প্রয়াসের কাছে অবশ্যই হার মানবে করোনা ভাইরাস। আপাতত সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।