আবারও শোকের ছায়া ফুটবল মাঠে। দেখতে দেখতে বিদায় নিচ্ছেন কিংবদন্তি খেলোয়াড়রা। সেইসব সহকারীদের পথ ধরেই এবার চলে গেলেন মোহনবাগানের (Mohun Bagan) প্রাক্তন অধিনায়ক ভবানী রায় (Vabani Roy)। রাইট-ব্যাক খেলোয়াড় ভবানী রায় প্রথম ওভারল্যাপিং খেলা উপহার দিয়েছিলেন দেশকে। সেই পথ ধরে পরে নজর কেড়েছেন অনেকেই। ভারতের ফুটবল ইতিহাসের সেই কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সকলে।
দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন ভবানী রায়। হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন বহুদিন। আজ সকালে ৮টা ২২ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বালি প্রতিভা ক্লাব থেকে ফুটবল জীবনের সূচনা তাঁর। তখন অবশ্য মাঝমাঠে খেলতেন তিনি। এইসময় গোটা বাংলাজুড়ে চলছে ফুটবলের এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। প্রোজেক্টর ঘাড়ে করে গ্রাম-মফস্বলে ঘুরে ঘুরে বিদেশি খেলোয়াড়দের খেলা দেখাচ্ছেন ডায়মন্ড কোচ অমল দত্ত। একদিন এভাবেই তিনি পৌঁছে গেলেন বালিতে। তখনই ওয়ার্ল্ড ইলেভেনের খেলা দেখিয়ে অমল দত্ত বুঝিয়েছিলেন কীভাবে ব্যাক-ফিল্ডের খেলোয়াড় উঠে গিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে চাপ সৃষ্টি করে। আবার তারপর নিজের জায়গায় ফিরে আসে। এই পদ্ধতিকেই বলে ওভারল্যাপিং। ভারতে তখনও এমন খেলা কেউ দেখেননি।
সেইদিনের সেই ঘটনা গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল ভবানীকে। এরপর ইস্টার্ন রেলের দলে কিছুদিন খেলার পর ১৯৬৭ সালে মোহনবাগানে যোগ দেন ভবানী। মাঝমাঠ ছেড়ে এবার খেলতে শুরু করেন হাফব্যাকে। পরের বছর শ্রীলঙ্কা সফরের সময় হাফব্যাক থেকে সরে গিয়ে রাইট-ব্যাকে খেলতে হয় তাঁকে। আর এর পরেই ১৯৬৯ সালে মোহনবাগানের কোচ হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন অমল দত্ত। ওভারল্যাপিং খেলা তার আগেই শুরু করেছেন ভবানী। অমল দত্তর কোচিং পেয়ে সেই খেলা আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে শুরু করল। ভারতের ফুটবল ইতিহাসে শুরু হল একটা নতুন যুগ।
৭ বছর মোহনবাগানের হয়ে খেলেছেন ভবানী। ১৯৭২ সালে দলের ক্যাপ্টেন হিসাবে দায়িত্বও নিয়েছিলেন। মোহনবাগানের পাশাপাশি খেলেছেন রাজ্য এবং জাতীয় দলেও। ১৯৬৯ সালে মারডেকা কাপে মোহনবাগানের আরও ৫ জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে জাতীয় দলে ছিলেন তিনিও। মোহনবাগান ছাড়ার পর কিছুদিন ভ্রাতৃ সঙ্ঘ ক্লাবে খেলেছিলেন তিনি। তারপর খেলার মাঠ থেকে পুরোপুরি অবসর নেন। কিন্তু মাঠে যে নতুন ইতিহাস তিনি তৈরি করে গিয়েছেন, তার ধারা এখনও চলছে। তাঁর মৃত্যুর পরেও প্রতিটা ম্যাচে খেলোয়াড়দের ওভারল্যাপিং মনে করিয়ে দেবে ভবানী রায়ের কথা।
Powered by Froala Editor