ব্যক্তিগত বিমানে চেপেই প্রতিদিন কাজে যান এই শহরের বাসিন্দারা

বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য অধিকাংশ মানুষই ভরসা করেন গণ-পরিবহনের ওপর। অনেকে ব্যক্তিগত মোটরগাড়ি কিংবা বাইকে চেপেও কর্মক্ষেত্রে যান। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে পৌঁছানোর জন্য যদি এরোপ্লেনের ব্যবস্থা থাকত আপনার জন্য? কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পেরিয়ে যেতে পারতেন কয়েকশো মাইল পথ?

শুনতে অনেকটা কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাসের প্রেক্ষাপটের মতো লাগলেও, এমনই আশ্চর্য শহরের রয়েছে বাস্তবেই। যেখানে সাধারণ মানুষ বিমানে চেপেই কাজে যান, কখনও আবার সন্তানদের পৌঁছে দেন স্কুল। একটি-দুটি নয়, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুকে ছড়িয়ে রয়েছে এ-ধরনের বেশ কিছু শহর। যা সাধারণভাবে স্থানীয় মানুষদের কাছে পরিচিত ‘রেসিডেন্সিয়াল এয়ারপার্ক’ বা আবাসিক এয়ারপার্ক নামে। আর এই তালিকায় অন্যতম একটি নাম ক্যালিফোর্নিয়ার (California) ক্যামেরন এয়ারপার্ক (Cameron Airpark)। 

এই ছোট্ট শহরে পা রাখলেই রীতিমতো ছানাবড়া হতে বাধ্য মানুষের চোখ। সবমিলিয়ে ১২৪টি পরিবারের বসবাস এই শহরে। আমরা যেমন বাড়ির সঙ্গে যংযুক্ত গাড়ি রাখার গ্যারেজ দেখে অভ্যস্ত, ঠিক তেমনই ক্যামেরন এয়ারপার্কে গেলে দেখা যাবে প্রতিটি বাড়ির পাশেই রয়েছে ব্যক্তিগত বিমান রাখার জন্য বিশেষ হ্যাঙ্গারের ব্যবস্থা। সেখানে শোভা পাচ্ছে ডাবল-সিটার কিংবা ফোর সিটার সিঙ্গেল-ইঞ্জিন বিমান। 

তবে শুধু হ্যাঙ্গারই নয়, এই শহরের রাস্তাঘাট দেখলেও চমকে যেতে হয় রীতিমতো। শহরের বাসিন্দার সঙ্গে হাজারের কম হলেও, এই শহরের সমস্ত রাস্তাই প্রায় ৪০-৫০ ফুট প্রশস্ত। এই রাস্তায় যেমন সাধারণ মানুষ গাড়ি চালান, তেমনই এই রাস্তাকে রানওয়ে হিসাবে ব্যবহার করেন ‘বিমানচালক’ আবাসিকরাও। এই রাস্তা এতটাই প্রশস্ত যে সেখানে একইসঙ্গে একটি বিমান এবং গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে অনায়াসেই। ফলে, আজ পর্যন্ত গাড়ির সঙ্গে বিমানের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই শহরে। 

প্রশ্ন থেকে যায়, এই আশ্চর্য শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল কবে? কেনই-বা সেখান সাধারণ মানুষ বিমানকেই বেছে নিয়েছিলেন ব্যক্তিগত পরিবহনের মাধ্যম হিসাবে? প্রশ্নের উত্তর পেতে পিছিয়ে যেতে হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ১৯৩৯ সালে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে মোট পাইলটের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার, তা ১৯৪৬ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ৪ লক্ষে। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দেশজুড়ে মার্কিন প্রশাসন নির্মাণ করেছিল এ-ধরনের ছোটো ছোটো বিমানঘাঁটি। যা মূলত বিমানবাহিনীর চালকদের থাকার জন্য আবাসন হিসাবে ব্যবহৃত হত। তাছড়াও নতুন পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিতে এবং প্রথাগত বিমানঘাঁটি থেকে কিছু বিমান আলাদা করে জনপদের মধ্যে লুকিয়ে রাখার জন্য ব্যবহৃত হত এই ঘাঁটিগুলি। 

বিশ্বযুদ্ধের পর ফুরিয়ে যায় এই ঘাঁটিগুলির প্রয়োজনীয়তা। অন্যদিকে নিষ্ক্রিয় এই সামরিক কেন্দ্রগুলিতে বসবাস শুরু করেন অবসরপ্রাপ্ত পাইলটরা। অনেকেই ব্যক্তিগত আগ্রহে ছোটো বিমান কিনেছিলেন তাঁরা সে-সময়। যা আজও ব্যবহার করে আসছে তাঁদের পরিবার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সে-দেশে সবমিলিয়ে ৬১০টি আবাসিক এয়ারপার্ক রয়েছে আজও। যা ব্যবহৃত করেন সাধারণ মানুষ। আর তাদের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এয়ারপার্ক ক্যামেরন। 

Powered by Froala Editor

More From Author See More