সাল ১৯৬২। বছর বাইশের একটি ছেলে মিউজিকের নেশায় ক্রমশ বেড়ে উঠছিল। নাম রিচার্ড স্টারকি। এমনিতে সাধারণ, কিন্তু ড্রামস্টিক হাতে পড়লেই রূপ বদলে যায়। নানা উঠোন ঘুরে সাড়ে পাঁচ ফুটের ছেলেটি এসে পড়ল ব্রায়ান এপস্টেনের হাতে। তিনি তখন আরেকটি ব্যান্ডের ম্যানেজার। ব্যান্ডের নাম? ‘বিটলস’! ধীরে ধীরে এই ব্যান্ডটির নাম সবার মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। চারজন তরুণের দাপটে কেঁপে উঠছে বিশ্ব। সেই তরুণেরই একজন ছিলেন পিট বেস্ট। ’৬২-তেই বিটলস ছেড়ে নিজের ব্যান্ড তৈরি করেন। ড্রামারের জায়গাটা ফাঁকা পড়ে রইল। সেই আসনেই এসে বসলেন রিচার্ড স্টারকি। মাত্র ২২ বছর বয়সে শুরু হয়েছিল একটি রূপকথার। আর গতকাল সেই ছেলেই পৌঁছে গেল ৮০ বছরে। বিটলসের সঙ্গে তাঁকে আর আলাদা করা যায়নি। রিচার্ড স্টারকি থেকে ‘দ্য’ রিঙ্গো স্টার— পুরো রাস্তা জুড়ে ছিল উন্মাদনা, হতাশা আর জীবনে বেঁচে থাকার স্বপ্ন…
আজ রিঙ্গো স্টার একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। এক দশকে সঙ্ঘ ভেঙে গিয়েছিল, নিজের পুরনো সাথীদের মধ্যে দুজন ইতিমধ্যেই বিদায় নিয়েছেন; কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন প্রবলভাবে। ড্রামস্টিকই তাঁর জিয়নকাঠি। আর সঙ্গে আছে তাঁর অগুনতি ভক্ত। তাঁদের সঙ্গেই ৮০ বছরের জন্মদিন পালন করবেন আরও বড়ো করে, এমনটাই পরিকল্পনা করেছিলেন রিঙ্গো। ঠিক হয়েছিল, ১০০ জন ফ্যানের সঙ্গে জন্মদিন কাটাবেন তিনি। সেই ২০০৮ সাল থেকে এমনটাই করে আসছেন বটে; কিন্তু এবারের প্ল্যান আরও বড়ো ছিল। সেই ভক্তদের সঙ্গে একটি মিউজিকাল কনসার্টের আয়োজন করবেন তিনি, এমনই ছিল ভাবনা।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সেইসবে বাধা হয়ে দাঁড়াল। অতএব, পরিকল্পনায় এল বদল। জন্মদিন উপলক্ষে মিউজিকাল কনসার্ট হল ঠিকই, তবে সেটা অনলাইনে। ইউটিউবে এই চ্যারিটি কনসার্ট আয়োজন করলেন স্যার রিঙ্গো স্টার; সঙ্গে থাকলেন পল ম্যাকার্টনি, জো ওয়ালস, বেন হারপার-সহ আরও অনেক স্টাররা। উঠে এল বিটলসের কথা, জীবনের কথা, চলে যাওয়া বন্ধুদের কথা; সঙ্গে একের পর এক গান।
রিঙ্গো স্টার যখন প্রথম বিটলসের সঙ্গে মঞ্চে পা রেখেছিলেন, তখন অনেকেই তাঁকে মেনে নিতে পারেননি। পিট বেস্টের জায়গায় এই বাচ্চা ছেলেটা? ধীরে ধীরে সেই বাচ্চা ছেলেটিই সবার মনে জায়গা করে নিল। ড্রাম আর পারকাশনই নয়, বিটলস ফ্যানরা চাইল রিঙ্গো গান গাক। ব্যস, তিনিও গলা মেলালেন ‘ইয়েলো সাবমেরিন’, ‘অক্টোপাস’স গার্ডেন’-সহ আরও বেশ কিছু গানে। এমন জনপ্রিয়তার স্তরে চলে গেলেন যে, স্রেফ রিঙ্গো স্টারকে নিয়েই বেশ কিছু গান তৈরি হয়েছিল। একে একে নাইটহুড পাওয়া, কিংবদন্তিদের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া, বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ড্রামারের তকমা পাওয়া, ‘রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেম’-এ জায়গা পাওয়া— রিঙ্গো স্টার তখন সত্যিই স্টার। আজও তাতে খামতি পড়েনি। চুল কমে গেছে, চামড়াও কুঁচকে গেছে; তবুও এই ৮০ বছরের তরুণ ছুটেই চলেছেন মিউজিকের নেশায়।
আরও পড়ুন
কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদ, দীর্ঘ আটবছর পর নতুন অ্যালবাম নিয়ে আসছেন বব ডিলান
Powered by Froala Editor