বিষাদের সুরেই বাজবে এবারের ঢাক, দেবীপক্ষেও দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন বাংলার ঢাকিরা

একবছর পর আবারও দুর্গাপুজোর আহ্বানে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে আকাশে বাতাসে। তবে এবছরের পরিস্থিতি আর পাঁচটা বছরের মতো নয়। মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে আতঙ্কের পরিবেশ চারিদিকে। পুজোর আনন্দের মধ্যেও একটা বিষাদের সুর। আর সেই সুর বুঝি শোনা যাবে ঢাকের কাঠিতেও। শিল্পীরা অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না। কাজ পেলেও তা অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই সামান্য। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সকলেই। আর সেই সুর যে শিল্পীদের কাঠির তালেও এসে পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক।

মুর্শীদাবাদ জেলার বেলডাঙা গ্রামের শিল্পী টোটন দাস জানাচ্ছেন, “প্রতি বছরই আমি একটাই পুজোতে ঢাক বাজাই। এর উপরেই সারা বছরের রোজগারের অনেকটা নির্ভর করে। কিন্তু এবছর পুজোর উদ্যোক্তারা এসে বললেন প্রতি বছরের সমান মজুরি তাঁরা এবছর আর দিতে পারবেন না।” উদ্যোক্তারাও চিন্তিত ছিলেন এবছর আদৌ পুজোর আয়োজন করা যাবে কিনা। ফলে এত কম সময়ে সব আয়োজন করে ওঠা তাঁদের পক্ষেও যথেষ্ট সমস্যার। আবার শিল্পীরা যদি না বলে দেন, তাহলে তাঁদের আর কোনো কাজই থাকবে না। কিছু না পাওয়ার থেকে তো কিছু পাওয়া ভালো। তাই অর্থনৈতিক ক্ষতি সামলেও ঢাকে কাঠি দিতেই হবে।

বেলডাঙার কাছের বাঁশচ্যাতর গ্রামের আরেক শিল্পী লালু দাস বিগত ২৫ বছর ধরে মুম্বাই শহরে গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের বাড়ির পুজোয় ঢাক বাজিয়ে আসছেন। কিন্তু এবছর আর মুম্বাই শহরে কোনো পুজো হবে না। লালু দাস জানাচ্ছেন, “অভিজিৎ বাবু আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন এবছর পুজো সম্ভব হবে না। কিন্তু অন্য কোনো পুজোয় ডাক পাইনি আর। আই পুজোয় রোজগার হবে না কিছু।” শুধুই দুর্গাপুজো নয়, আরও নানা অনুষ্ঠানে ঢাক বাজান তাঁরা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ সমস্ত অনুষ্ঠানই। বিগত ৭ মাস ধরে কোনো রোজগারই নেই।

তবু ঢাকের সুরে আগমনীর আহ্বান শোনা যাবে নিশ্চিত। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তার আনন্দ কতটা বজায় থাকবে, জানেন না কেউই। টোটন দাসের কথায়, “ঢাকের সঙ্গে নাচ তো আর হবে না। আনন্দে ফাঁকি থেকেই যাবে।” তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখনও ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। অন্যদিকে দলের প্রত্যেকের ঢাক নিয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় কীভাবে আসবেন, সেবিষয়েও চিন্তিত টোটন দাস। “বাসে চড়ে কি আর এত বড়ো বাজনা নিয়ে যাওয়া যায়?”

আরও পড়ুন
সময় কম, তাই মোটা তুলিতেই চলছে কাজ; মণ্ডপসজ্জা নিয়ে কী ভাবছেন শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত?

মা দুর্গা আসছেন। একটু সৌভাগ্যের আশায় দিন গুনছেন পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা জীবিকার মানুষ। কিন্তু সেই আশা যেন কোথায় সিঁদুরে মেঘের মতোই হারিয়ে যাচ্ছে। খুব কঠিন এই সময়। তবে এই একটা বছর পেরিয়ে যেতে পারলে হয়তো আগামী বছর আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কাজের বরাত সামান্যই, পুজোর মুখে ধুঁকছে বাংলার ‘শোলাশিল্প গ্রাম’ বনকাপাশি

More From Author See More