ক্যাথলিক গির্জায় পাদ্রির আসনে বসার অধিকার নেই কোনো নারীর। এমনকি এমন ঘটনা রীতিমতো ‘অপরাধ’ বলেই পরিগণিত হয় ক্যাথলিক সমাজে। কারণ হিসাবে বলা হয়, যিশুর থেকে যে-সকল শিষ্য দীক্ষা নিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই ছিলেন পুরুষ। পরবর্তীতে তাঁদের থেকে দীক্ষা পেয়েছিলেন অন্যান্য পুরুষ শিষ্যরা। তাই পাদ্রি হওয়ার যোগ্য উত্তরসূরি পুরুষরাই। এমনটাই অভিমত ক্যাথলিকদের। অথচ, যিশু স্বয়ং ছিলেন সমানাধিকারের পক্ষে। স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই বিষয়টিকেই উপেক্ষা করে যায় ক্যাথলিক (Catholic) সমাজ।
এই লিঙ্গ বৈষম্যের (Gender Biasness) বিরুদ্ধেই লড়াই-এ সামিল হয়েছেন একদল খ্রিস্ট-ধর্মাবলম্বী মহিলা। আজ নয়, এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ২০ বছর আগে। জড়িত ছিলেন ইউরোপ এবং মার্কিন মহিলারা। সেটা ২০০২ সাল। দানুবে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে প্রথমবারের জন্য ‘অরডিনেশন ডে’ উদযাপন করেছিলেন ক্যাথলিক মহিলারা। মূলত এই আন্দোলনে সামিল ছিলেন নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্ক গির্জার ক্যাথতলিক সম্প্রদায়ের মহিলারা। মূলত সমানাধিকার নিয়েই দাবি তুলেছলেন তাঁরা। সেইসঙ্গে সরব হয়েছিলেন পুরুষ ধর্মযাজকদের (Priests) দ্বারা যৌননিগ্রহের শিকার হওয়ার শিশুদের পক্ষে।
ক্রমে এই আন্দোলন ইউরোপের সীমা ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। বিশেষত লাতিন আমেরিকায়। কলোম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং ফ্রেঞ্চ গিয়ানার মতো অঞ্চলেও দাবি ওঠে যাজক হওয়ার অধিকার দিতে হবে মহিলাদের। তবে এই আন্দোলন নতুন মাত্রা পায় বিগত দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে। শুধু যাজক নয়, পোপের আসনেও মহিলাদের নিয়োগ করার দাবি ওঠে জার্মানিতে। গড়ে ওঠে বৃহত্তর আন্দোলন।
না, এই আন্দোলনকে স্বীকৃতি দেয়নি ভ্যাটিকান। তবে তা সত্ত্বেও একাধিক ইউরোপীয় এবং মার্কিন ক্যাথলিক সমাজে গির্জার পাদ্রির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে মহিলাদের হাতে। যার মধ্যে অন্যতম নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্ক গির্জা। যে গির্জা থেকে সূত্রপাত হয়েছিল এই আন্দোলনের, সেখানেই নিয়োগ করা হয় প্রথম মহিলা পাদ্রি। নজির গড়েছিলেন অ্যান ট্রোপিয়ানো। তারপর বিশ্বজুড়ে সবমিলিয়ে ছোটো-বড়ো প্রায় আড়াইশোটি গির্জার সর্বোচ্চ আসনে বসেছেন মহিলারা।
অবশ্য ধর্মযাজকের এই পথ খুব একটা সহজও নয় মহিলা পাদ্রিদের কাছে। ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক দেশে একাধিকবার আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে মহিলা পাদ্রিদের। এমনকি তাঁদের সুরক্ষার জন্য গির্জার মতো পবিত্র জায়গায় বন্দোবস্ত করতে হয়েছে নিরাপত্তাকর্মীদের। পাশাপাশি তাঁদের সমাধিকরণকেও ‘অবৈধ’ তকমা দিয়ে নিষিদ্ধ করেছে বহু তথাকথিত ‘ক্যাথলিক’ সেমেটারি।
তবে দেখতে গেলে এই আন্দোলনের ব্যর্থ হয়নি একেবারেই। ধীরে ধীরে এই আন্দোলনের প্রভাবে বদলাচ্ছে ক্যাথলিক সমাজের চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গিও। বিগত কয়েক বছরে অ্যাডভাইসারি কমিটিতে একাধিক মহিলা নিয়োগ করেছেন খোদ পোপ ফ্রান্সিস। ফলে, আগামীদিনে তাঁর আসনেও যে দেখা যাবে না কোনো মহিলাকে, এমনটা অসম্ভব নয় একেবারেই…
Powered by Froala Editor