এ যেন ঠিক ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল’-এর মতো ঘটনা। একটা সময় বাইরে থেকে দেখে উঁচু পাথুরে জমি ছাড়া আর কিছুই মনে হত না। কিন্তু তার ভেতরেই যে প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আছে, কে জানত। লকডাউনের পরিস্থিতির মধ্যেই ইউরোপীয় সভ্যতার ইতিহাসের আরও একটি নিদর্শন খুঁজে পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। আরও ভালো করে বললে, এট্রুসকান সভ্যতার নিদর্শন।
কর্সিকা দ্বীপে গবেষণা চলাকালীন এই নতুন প্রত্নক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছেন ফরাসি গবেষকরা। বাইরে থেকে দেখলে একটা বড়ো ঘরের ভগ্নাবশেষ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কী ছিল, তা আন্দাজ করা প্রথমে একটু মুশকিল ছিল। যত খোঁজ এগিয়েছে, ততই স্পষ্ট হয়েছে সবটা। ঘরটির একটি দিকে সিঁড়ি নেমে একটি জায়গায় ঢুকে গেছে। গবেষকরা সেখানেই কাজ করতে লাগলেন। দেখা গেল, সেখানে বেশ কিছু বড়ো জার, থালা; সঙ্গে একটা আস্ত কঙ্কাল! তাহলে কি এটা সমাধিক্ষেত্র ছিল? এখন সেটাই বলছেন ওই গবেষকরা। এট্রুসকান সভ্যতার বিশাল সমাধিঘরের একটির সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা।
লকডাউন, করোনার পরিস্থিতির মাঝেই এই গবেষণা চালিয়ে গেছেন তাঁরা। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানা যাচ্ছে, যে কঙ্কালটি পাওয়া গেছে সেটি এক মহিলার। উদ্ধার করার সময় কঙ্কালটির সঙ্গে দুটো সোনার দুল এবং হাতের আঙ্গুলে দুটি আংটি পাওয়া যায়। এছাড়াও পায়ের কাছে একটি বড়ো ও দুটি ছোটো জার পাওয়া যায়। ছোটো জার দুটিতে সম্ভবত সুগন্ধি জাতীয় কিছু রাখা ছিল। এছাড়াও পাওয়া গেছে আরও বেশ কিছু জিনিস। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের, এই সব জিনিসই অত্যন্ত যত্ন করে রাখা হয়েছিল। একচুলও এদিক ওদিক ছিল না। শুধু ওই কবরটি নয়; গোটা সমাধিঘরটিই অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তৈরি করা হয়েছিল। সেখান থেকেই পরবর্তী প্রশ্নটি আসে, সমাধিটি কার? সেই গবেষণাই এখন করছেন গবেষকরা।
ইউরোপের প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে এট্রুসকান সভ্যতা অন্যতম। মূলত টাসকানি অঞ্চলে এর বিকাশ ঘটেছিল। আপাতত এই সভ্যতার সম্পর্কে যা তথ্য পাওয়া গেছে, তা থেকে বলা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ থেকে এট্রুসকানের বিকাশ শুরু। মোটামুটি খ্রিস্টপূর্বাব্দ ১০০-তে এসে এটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। তখন রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান শুরু। ধীরে ধীরে রোমের অধীনে চলে আসে এই জায়গাটি। এতদিনে সেই সভ্যতারই বেশ কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে। এবার তাদের সমাধিক্ষেত্রের হদিশও পাওয়া গেল। যা নিয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত ইউরোপের ঐতিহাসিক মহল।