গতকালই নতুন বছরে পা দিল ইথিওপিয়া। বছরের ১৩টি মাস (Thirteen Months) শেষ করে নতুন করে একটি বছরে পা দেওয়া, উৎসবে মেতে উঠেছিলেন গোটা দেশের মানুষ। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, ১৩ মাসের বছর। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই বছরে ১২টি মাস, কিন্তু ইথিওপিয়ায় (Ethiopia) একটি বেশি। শুধু তাই নয়, যিশুর জন্ম হিসাবে ক্যালেন্ডার তৈরি হলেও ইথিওপিয়া সবে পা রাখল ২০১৪ সালে। কারণ পাশ্চাত্যের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে অনেক অংশেই মিল নেই ইথিওপিয়ার খ্রিস্টানদের। অনেকের মতে ইথিওপিয়ার গিজ ক্যালেন্ডারের (Ge’ez Calendar) কোপিক অর্থোডক্স ক্যালেন্ডারের সাদৃশ্যই বেশি। তবে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের মতোই এতে আছে লিপ-ইয়ারের প্রথাও।
বছরের কোন মাসে কতগুলি দিন, তা মনে রাখার জন্য বাকি দেশগুলোর মতো ছড়া মুখস্থ করতে হয় না ইথিওপিয়ার শিশুদের। হিসাবটি অত্যন্ত সহজ। ১২টি মাসে ৩০টি করে দিন। এই ১২ মাসের চক্র শেষ হলে আসে ৫টি অতিরিক্ত দিন। লিপ-ইয়ারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা বেড়ে হয়ে যায় ৬ দিন। এই অতিরিক্ত দিনগুলিকে অবশ্য ইথিওপিয়ার মানুষ আলাদা মাস হিসাবে গণ্য করেন না। সেই হিসাবে তাঁদের দেশেও ১২ মাসে বছর। কিন্তু নাম না থাকলেও, সেও যে এক মাসের হিসাবই। শুধু বছরে ১৩টি মাসই নয়, ইথিওপিয়ার দৈনিক সময়ও পাশ্চাত্যের দেশগুলির সঙ্গে মেলে না। এখানে যখন দিন শুরু হয়, তখন অন্যান্য ঘড়িতে সকাল ৬টা। তাই পর্যটকদের কাছে এ-দেশে সময়ের হিসাব রাখা একটু সমস্যাজনক হয়ে ওঠে।
আসলে সময় এগিয়ে গেলেও পুরনো নিয়মকে জড়িয়ে থাকাই ইথিওপিয়ার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য। আর এই বৈশিষ্ট্য নতুন নয়। আধুনিক হিসাবে ৫০০ খ্রিস্টাব্দে একবার নতুন করে গণনার কাজ করে রোমের ক্যাথলিক চার্চ। আর তখনই যিশুর জন্মের সময় বছর সাতেক পিছিয়ে যায়। কিন্তু এই নতুন গণনা মানতে রাজি ছিল না ইথিওপিয়ার অর্থোডক্স চার্চ। তাই বাকি পৃথিবী ২০২১ সালের মাঝামাঝি এসে গেলেও ইথিওপিয়ার ক্যালেন্ডারে সবে ২০১৩ সালের পাতা ওল্টাল।
ইথিওপিয়া, বা বলা ভালো আবিসিনিয়ার মানুষ কোনোদিন বাইবেল বর্ণিত আর্ক অফ কনভেন্যান্টের হারিয়ে যাওয়ার কথাও বিশ্বাস করেন না। তাঁদের বিশ্বাস, এখনও আকসুম শহরের গির্জায় সেই পবিত্র সিন্দুক লুকানো আছে। ঈশ্বরের পুত্র মোজেসকে যে সিন্দুক হাতে তুলে দিয়েছিলেন ঈশ্বর নিজেই। তবে এমন একটা ধর্মপ্রাণ দেশেও কোনোদিন সাম্প্রদায়িকতা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। আরবের মাটিতে যখন প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছিল হজরত মহম্মদ এবং তাঁর অনুগামীদের, তখন মহম্মদের ১৫ জন শিষ্য এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন আবিসিনিয়ার আকসুম শহরেই। আরবের বাইরে সেই প্রথম পা রেখেছিল ইসলাম ধর্ম। আবার ইথিওপিয়ার বুকেই জন্ম পৃথিবীর শেষ আব্রাহামিক ধর্ম ‘রাসতাফারি’-র। নিছক ধর্মমতের বাইরে বেরিয়ে যা হয়ে উঠেছিল আফ্রিকার পরাধীন মানুষের মুক্তির সংগ্রাম। আজও সেই মিলিত সংস্কৃতির ধারাকে বহন করে চলেছে ইথিওপিয়া।
আরও পড়ুন
ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধ-পরিস্থিতি, খাদ্যসংকটে ৩৩ হাজার শিশু
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের কবলে ইথিওপিয়া, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ, চলছে ‘মিলিটারি-শাসন’ও