রাস্তা ধারে কিংবা রেল স্টেশনে রোপণ করা হয়েছে ছোট্ট চারা (Tree Plantation)। আর তার চারিদিক ঘিরে বসানো হয়েছে লোহার তারের (Wire Cage) বেড়া। এই দৃশ্যের সঙ্গে আমরা সকলেই অল্প-বিস্তর পরিচিত। কিন্তু গাছের এই ‘প্রতিরক্ষা কবচ’ নিয়েই এবার সরব হলেন শহরের পরিবেশকর্মীরা। কারণ, উপকারের বদলে এই তারের বেড়াই একটা সময় পর ডেকে আনছে বিপদ।
ব্যাপারটা ঠিক কেমন? গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো, ময়দান, সার্কুলার রোড, দেশপ্রিয় পার্ক— কলকাতার যে-কোনো অঞ্চলে গেলেই প্রমাণ মিলবে এই ঘটনার। গাছ পূর্ণবয়স্ক হয়ে যাওয়ার পরেও, সরানো হয়নি এই সব তারজালি। কোথাও গাছের গুঁড়ির গায়েই সেসব জাঁকিয়ে বসেছে শক্ত হয়ে, কোথাও আবার চারদিক ঘেরা তারের এই বেড়াই হয়ে উঠেছে ডাস্টবিন। নির্দ্বিধায় তাতে প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলে চলেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তারজালি সরানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সেসব আবর্জনা পরিষ্কারের সুযোগটুকুও প্রায় নেই বললেই চলে।
আজ থেকে প্রায় তিন-চার দশক আগে রোপণ করা হয়েছিল এই বৃক্ষগুলির চারা। অথচ বছরের পর বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কেন এই বিষয়টিতে নজর দেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্নই তুলছেন পরিবেশকর্মীরা। শুধুই কি তাই? প্রশাসনিকভাবে বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে এখনও অব্যাহত রয়েছে গাছকে বেড় দেওয়ার এই পন্থা। মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি কর্ণধার জয়িতা কুণ্ডু জানালেন, “যে কোনো গাছের চারিদিকে স্থায়ী বেড়া গাছের বৃদ্ধির পরিপন্থী। শুধু তারের জাল নয়, পিচের টিন কেটে গাছের চারিদিকে ঘের দেওয়ার একাধিক ঘটনা নজরে এসেছে আমাদের। গাছের গুঁড়িকে ঘিরে একটা বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে। এই ধরনের বেড়া দেওয়ার ফলে গাছের বৃদ্ধি তো আটকাচ্ছেই, পাশাপাশি বাস্তুতন্ত্রও বিঘ্নিত হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে।”
এ-কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই, আজ থেকে কয়েক দশক আগেও যে পরিমাণ গবাদি পশু কলকাতা কিংবা অন্যান্য শহরতলির রাস্তায় দেখা যেত, সেই পরিস্থিতি বর্তমানে নেই। তবে এখনও কেন প্রশাসন গতানুগতিক এই পন্থাকেই মেনে চলছে, প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের দাবি, একান্তই যদি গাছের চারা রক্ষার্থে কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে যেন বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। পরিবেশকর্মী জয়িতা কুণ্ডু জানালেন, “বর্তমানে পাতলা মশারির মতো জাল বাজারে চলে এসেছে। এই ধরনের জাল ব্যবহার করা যেতে পারে। তা স্থায়ী না হওয়ায়, গাছ বেড়ে যাওয়ার পর সরিয়েও নেওয়া যায় সুবিধামতো।”
আরও পড়ুন
কাশ্মীরে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩ লক্ষ বৃক্ষচ্ছেদন, ঘর হারাবেন ৩৭০০ পরিবার
ইতিমধ্যেই কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নেচার মেটস এই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এবং বনদপ্তরের বনায়ন বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছে। মরচে ধরা লোহার তারের খাঁচাগুলি দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন কেএমসি’র পার্ক বিভাগের আধিকারিকরা। কিন্তু কবে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে এই আবেদনের ভিত্তিতে, তা জানা নেই কারোরই…
আরও পড়ুন
বৃক্ষচ্ছেদন রুখতে গাছের গায়ে ভগবানের ছবি সাঁটা ছত্তিশগড়ে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেই বৃক্ষচ্ছেদন রুখছেন আমাজনের আদিবাসীরা