প্রতিবছর কালীপুজো এবং দীপাবলিতে এক ধাক্কায় বৃদ্ধি পায় দূষণের মাত্রা। তাই গত বছরের মতো এবারেও কালীপুজোর মরশুমে প্রথম থেকেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। গতকালই সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, কেবলমাত্র পরিবেশবান্ধব ‘সবুজ বাজি’-ই (Green Crackers) জ্বালাতে পারবেন নাগরিকরা। তাও রাত ৮টা থেকে ১০টা— মাত্র এই দু’ঘণ্টার জন্য দেওয়া হয়েছে সেই অনুমতি। কিন্তু আদৌ কি আইন প্রণয়ন করে রুখে দেওয়া যাবে পরিবেশ দূষণকে? সচেতনতা গড়ে তুলতে না পারলে সরকারের এই উদ্যোগ যে বৃথা যাবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। আর সেই জন্যই এবার রাস্তায় নামলেন হাওড়ার পরিবেশকর্মী (Environmentalists) এবং স্বেচ্ছাসেবকরা।
হাওড়ার সংগঠন ‘মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি’-র উদ্যোগে আজ থেকেই শুরু হল সেই প্রচার। শুধুমাত্র মহিলাদের নিয়েই আজ আয়োজিত হয় সচেতনতামূলক পদযাত্রা। সকাল ১১.৩০টায় হাওড়ার গরুরহাট মোড় থেকে শুরু করে উলুবেড়িয়া থানায় গিয়ে শেষ হয় এই সভা। মানুষকে সতর্ক করার পাশাপাশি দেওয়ালে দেওয়ালে সাঁটা হয় পোস্টারও।
“শব্দবাজিই হোক কি আতসবাজি— উৎসব যেন সম্পূর্ণ বাজিবর্জিত হোক এবং ডিজে বর্জিত হোক সেটাই আমরা চাইছি। এই সময়টায় শব্দদূষণ প্রচণ্ডভাবে মানুষের ক্ষতি করে। এবং এই সময়ে বাজির ধোঁয়া কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর। ফলে, সম্পূর্ণভাবে বাজি জ্বালানো বন্ধ করাই একমাত্র হাতিয়ার দূষণরোধের। প্রদীপ এবং মোমবাতির আলোয় উৎসব উদযাপন করুন, এই বার্তাই দিচ্ছি আমরা”, জানালেন মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতির সম্পাদক জয়িতা কুণ্ডু।
আরও পড়ুন
অপরিণত শিশুমৃত্যুতে শীর্ষে কলকাতা, ঘাতক কয়লাজনিত দূষণ
রাজ্য সরকার পরিবেশবান্ধব বাজি জ্বালানোর অনুমতি দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাও দূষণমুক্ত নয় সম্পূর্ণভাবে। বোরিয়াম নাইট্রেট ব্যবহৃত না হলেও, বেঁধে দেওয়া মাত্রায় সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম নাইট্রেট ব্যবহৃত হবে সবুজ বাজিতে। যা সাধারণ বাজির তুলনায় ৩০ শতাংশ কম দূষণ করলেও, পরিবেশ বিষিয়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট। পাশাপাশি সেই নির্দেশও ঠিক কতটা মানা হবে তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করলেন জয়িতা কুণ্ডু, “ই-ক্র্যাকার জ্বালানোর কথা জানানো হলেও, সেই ধরনের বাজি কিন্তু সার্বিকভাবে বাজারে আসেনি। ফলে, অন্যান্য বছরের মতো এবারেও দেদার বিক্রি হচ্ছে বাজারচলতি বাজিগুলি।”
আরও পড়ুন
রাস্তার মধ্যেই ধোঁয়া পরীক্ষা, দূষণ নিয়ন্ত্রণে পথে নামছে কলকাতা পুলিশ
শুধু আজকের পথযাত্রাই নয়, আসন্ন কালীপুজো পর্যন্ত সচেতনতামূলক প্রচার চলবে হাওড়ার এই সংগঠনের। সেইসঙ্গে কালীপুজোর দু’দিন এবং ভাসানের দিন বাজি নিয়ন্ত্রণে টহলদারির ব্যবস্থাও করেছেন জয়িতা কুণ্ডুরা। খোলা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম। ৯৪৩৩৪৫০৯৬৩, ৭৯৮০৪০৭৫৪৪— এই দুটি নম্বরে পাওয়া যাবে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন পরিষেবা। উক্ত ৩দিন জানানো যাবে অভিযোগ। জয়িতা জানালেন, “অভিযোগকারীর সমস্ত তথ্য গোপন রেখেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। আইনিভাবে যাবে পুলিশও আমাদের সাহায্য করে সেই মর্মে উলুবেড়িয়ার এসপি, রুরাল এসপি, এসডিও-র কাছেও আজ স্মারকলিপি জমা দিয়েছি আমরা।”
আরও পড়ুন
দূষণের জেরে ভারতবাসীর গড় আয়ু কমবে ৯ বছর!
সম্প্রতি গোটা বিশ্বজুড়েই প্রথম সারির চর্চার টপিক হয়ে উঠেছে পরিবেশ দূষণ। দূষণের বৈশ্বিক রিপোর্টের তালিকায় একদম শুরুর দিকেই রয়েছে দিল্লি, কলকাতার মতো শহরগুলি। কিন্তু তারপরেও যেন টনক নড়ছে না সাধারণ মানুষের। বাড়ছে না সতর্কতা। এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে পরিবেশকর্মীদের অভিনব এই উদ্যোগ ভরসা যোগাচ্ছে পরিবেশবান্ধব উৎসব পালনের, দূষণমুক্ত ভবিষ্যতের...
Powered by Froala Editor