আইনি অধিকার পাক বন্যপ্রাণী, নদী ও গাছেরাও, দাবি পরিবেশবিদদের

‘জেনোসাইড’ অর্থাৎ গণহত্যা। কথাটার সঙ্গে সকলেই পরিচিত আমরা। কিন্তু সকলের চোখের সামনেই নির্বিচারে গণহত্যা চলছে প্রতিনিয়ত। না, সরাসরি মানুষ-নিধন নয়, বরং, পরিবেশকে ধ্বংস করেই মানুষের ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। আর পরিবেশ-নিধন বা ‘ইকোসাইড’ (Ecocide) রুখতে এবার বন্যপ্রাণী থেকে শুরু করে অরণ্য এবং নদীরও আইনি অধিকারের (Legal Rights) জন্য বিশেষ আবেদন করলেন যুক্তরাজ্যের দুই পরিবেশবিদ।

যুক্তরাজ্যের পেশাদার আইনজীবীদের সংস্থা ‘ল’সোসাইটি’-তে প্রকাশিত হয়েছে গবেষক ডঃ ওয়েন্ডি শুল্টজ এবং ডঃ ট্রিস ও’ফ্লিনের লেখা ‘ল ইন দ্য এমার্জিং বায়ো এজ’-খ্যাত এই প্রতিবেদনটি। 

ইকুয়েডর এবং বলিভিয়া ইতিমধ্যেই প্রকৃতি সংরক্ষণে গাছ ও নদীর আইনি অধিকার নিশ্চিত করেছে। কোনো কারণ ছাড়া বনভূমি নিধন সেখানে ফৌজদারি অপরাধ। যদিও এই আইনের প্রক্রিয়া এখনও পর্যন্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি, তা সত্ত্বেও বাকি বিশ্বকে এই পথেই হাঁটতে হবে আগামীতে, সেই বার্তাই দিচ্ছেন ডঃ শুল্টজ এবং ও’ফ্লিন। 

তবে শুধু দূষণ কিংবা পরিবেশ-নিধনই নয়, অতিসাধারণ বেশ কয়েকটি বিষয়েও দৃষ্টিআকর্ষণ করেছেন ব্রিটিশ গবেষকদ্বয়। যেমন, পোষ্যপালন এবং গবাদি পশু প্রতিপালন। পরিবেশের সঙ্গে পোষ্য পালনের কোনো যোগাযোগ নেই বলেই মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবে ব্রিটিশ গবেষকদের মতে, এক্ষেত্রেও লঙ্ঘিত হয় তাদের অধিকার। শিশু অবস্থাতেই মায়ের থেকে আলাদা করে দেওয়া হয় কুকুর, শূকর কিংবা মেষশাবকদের। আবার বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য কৃত্রিমভাবে ইনজেকশন দেওয়া হয় হাঁস-মুরগিকে। এই ধরনের ঘটনায় একদিকে যেমন প্রভাবিত হচ্ছে প্রাণীরা, তেমনই তার সুস্পষ্ট প্রভাব পড়ছে মানুষের ওপরেও। প্রভাবিত হচ্ছে বিবর্তনের প্রাকৃতিক নিয়ম। 

তাছাড়াও জৈবপ্রযুক্তির প্রয়োগে পৃথিবী থেকে বহুকাল আগে অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণী, যেমন ম্যামথ কিংবা প্রাগৈতিহাসিক মেগালোডনদের ফিরিয়ে আনার বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তুলছেন দুই গবেষক। স্পষ্টতই তাঁদের দাবি, এইসকল প্রজাতি ফিরে আসার সঙ্গে প্রাণঘাতী রোগবহনকারী অণুজীবের ফিরে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে প্রবলভাবে। 

আগামীদিনে পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য রাখতে গেলে, শুধু দৈনিক আচার-আচরণই নয়, একইসঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও প্রোটোকল মেনে চলতে হবে মানুষকে। সেই বার্তাই দিচ্ছে ‘ল ইন দ্য এমার্জিং বায়ো এজ’। পাশাপাশি জানাচ্ছে, পরিবেশ বাঁচাতে রেশ টানা উচিত মানুষের সম্পত্তিবৃদ্ধির প্রবণতাতেও। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য লড়াই চালিয়ে আসছেন গবেষকরা। অবশ্য তাতে লাভ হয়নি কিছুই। আনুষ্ঠানিকভাবে ফৌজদারি আইন প্রণয়নই একমাত্র মানুষকে সতর্ক করতে পারে এই বিষয়ে, অভিমত ব্রিটিশ গবেষকদ্বয়ের…

Powered by Froala Editor